আইসিসিও ইসরায়েলের ব্যাপারে পক্ষপাতদুষ্ট
প্রবন্ধটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) কর্তৃক ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়কে কেন্দ্র করে, আফ্রিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা এবং আইসিসির বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছে। এটি বিশেষভাবে কেনিয়ার প্রেক্ষাপট, আইসিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, এবং ইসরায়েলের রাজনৈতিক কৌশল সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে। এখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে:
১. আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা: নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ
প্রবন্ধের প্রথম অংশে বলা হয়েছে যে, আইসিসি ইসরায়েলের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, যা অনেক কেনিয়ান নাগরিকের কাছে অপ্রীতিকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। কারণ, এক দশক আগে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা এবং তার ডেপুটি, বর্তমান প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোকে আইসিসি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছিল। তবে তারা আদালতের সাথে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এড়াতে বিচারে হাজির হয়েছিলেন।
২. কেনিয়ার আইসিসি মামলা: ২০০৭ সালের সহিংসতার প্রেক্ষাপট
কেনিয়ায় ২০০৭ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় প্রায় ১,৩০০ মানুষ নিহত হয়েছিল এবং ৬ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে ঘরছাড়া হতে হয়েছিল। এই সহিংসতা নিয়ে কেনিয়াত্তা ও রুটোকে দায়ী করা হয়, বিশেষ করে তারা বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ‘উপজাতি’ গোষ্ঠীকে সাহায্য করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। কেনিয়া আইসিসির বিচার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা না করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তবে পরে তারা বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং আইসিসি মামলাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
৩. ইসরায়েল ও আইসিসির সম্পর্ক
প্রবন্ধের পরবর্তী অংশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খান গত মে মাসে ইসরায়েলের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আবেদন করেছিলেন। যদিও ইসরায়েল এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা আইসিসির ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে, আইসিসি এমনকি ২০২১ সালে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করতে মোসাদের হুমকির মুখোমুখি হয়েছিলেন।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, খানের পূর্বসূরি ফাতু বেনসুদা, যিনি ২০২১ সালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাকে মোসাদ থেকে হুমকি পেয়েছিলেন। বর্তমানে, করিম খান নিজেই যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত, যা আইসিসির প্রতি রাজনৈতিক চাপের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।
৪. ‘নীতিগর্হিত পরিস্থিতি’ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি
প্রবন্ধটি “নীতিগর্হিত পরিস্থিতি” নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কৌশলকে ব্যাখ্যা করেছে। এটি হলো এক ধরনের কৌশল যা আইসিসির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন, নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলি নেতারা তাদের বিরুদ্ধে আইসিসির বিচারের সম্মুখীন হলে তা যেন সমস্ত ইহুদি জনগণের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে দেখা হয়, এই ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এছাড়া, কেনিয়ার নেতারা কিভাবে আন্তর্জাতিক চাপ ব্যবহার করে আইসিসির বিচার থেকে নিজেদের রক্ষা করেছিলেন, সেটাও আলোচনা করা হয়েছে। কেনিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি “মিটু ওয়েটু” বা নীতিগর্হিত পরিস্থিতির সাথে তুলনা করা হয়েছে, যা আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে আইসিসির বিচারের বিরুদ্ধে এক ধরনের বিরোধিতা সৃষ্টি করেছে।
৫. আইসিসির প্রতি আফ্রিকার দৃষ্টিভঙ্গি
আইসিসির বিরুদ্ধে আফ্রিকান দেশগুলোর অভিযোগ হচ্ছে, তারা শুধুমাত্র আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ নেতাদের বিচার করতে তৎপর থাকে এবং পশ্চিমা শক্তির নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। আফ্রিকার নেতা এবং বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন যে আইসিসি তাদের সুবিধার জন্য মামলার নির্বাচন করে এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ করে।
৬. ইসরায়েল ও পশ্চিমা মিত্রদের ভূমিকা
প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে, ইসরায়েল এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা আইসিসির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে নানা রাজনৈতিক কৌশল ব্যবহার করেছে। ২০২১ সালের যুদ্ধের পর, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইনে দায়বদ্ধ থাকার প্রতি অনীহা প্রকাশ করেছে এবং এই ধরনের আচরণকে ‘নীতিগর্হিত পরিস্থিতি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
৭. ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ ও আফ্রিকান সমালোচনা
প্রবন্ধটি ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ এবং আফ্রিকার মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে। এটি উল্লেখ করে যে, আফ্রিকান দেশগুলো একসময় ইউরোপীয় উপনিবেশ শক্তির শিকার হয়েছিল এবং আজকাল তারা আইসিসির বিচার প্রক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে তাদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছে।
প্রবন্ধটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া, বিশেষ করে ইসরায়েল, কেনিয়া এবং আফ্রিকার ভূমিকা নিয়ে গভীর রাজনৈতিক ও আইনি বিশ্লেষণ করেছে। এটি স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে কিভাবে আইসিসি ও তার বিচার প্রক্রিয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক কৌশল এবং চাপের সম্মুখীন হয়ে থাকে। আফ্রিকান দেশগুলো, বিশেষ করে কেনিয়া, এর বিরুদ্ধে অনীহা প্রকাশ করলেও আইসিসি তার দায়িত্ব পালন করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যদিও রাজনৈতিকভাবে এর প্রয়োগ এবং পক্ষপাতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।