অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না আইনজীবী সাইফুলের
সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকাণ্ড একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা, যা শুধু তার পরিবারকে নয়, পুরো সমাজকেও গভীরভাবে স্তব্ধ করেছে। তার স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন, যিনি এখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা, এবং তাদের ছোট মেয়ে তাসকিয়া, যার বয়স মাত্র তিন বছর, তারা দুইজনই আজ চিরকালীন শোকের মধ্যে পড়ে গেছেন। সাইফুলের পরিবারের সদস্যরা এখন এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে একদিকে অনাগত সন্তানের মুখ দেখার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি, অন্যদিকে তাসকিয়া তার বাবার ভালোবাসা বুঝে উঠার আগেই বাবাকে হারিয়েছে। এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা তাদের জীবনে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে, যা কোনো কিছুতেই পূর্ণ করা সম্ভব নয়।
জান্নাত আরা, সাইফুলের বোন, তার ভাইয়ের জন্য একে একে শোক প্রকাশ করছেন। সাইফুলের মৃত্যুর পর তিনি যে শোকের মধ্যে ভাসছেন, তা তার কথায় স্পষ্ট। তিনি বলছেন, “আমার পরিবার তো শেষ হয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না।” তার বোনের বিলাপ এবং স্ত্রীর দুঃখভারী কথা শোনার পর এটি আরও স্পষ্ট হয় যে, সাইফুলের মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্যই নয়, সমাজের জন্যও এক অপূরণীয় ক্ষতি।
একদিকে, সাইফুলের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর পরিবারে যে আনন্দ ছিল, তা এখন শোকের মধ্যে মিলিয়ে গেছে। এই আনন্দের দিনগুলো কেবলই অতীত হয়ে গেছে, আর এখন পরিবারের সদস্যরা এক ভয়াবহ শূন্যতার মধ্যে পড়ে গেছেন। বিশেষ করে ইসরাত জাহান তারিন, যিনি এখন নিজের সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন, এবং তার ছোট মেয়ে তাসকিয়া, যে কখনোই জানবে না বাবা কীভাবে তার ভালোবাসা এবং স্নেহে পরিপূর্ণ ছিল।
এদিকে, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের মৃত্যুর ঘটনাটি তার কাজের কারণে ঘটে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন এই হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে বলেন, এটি একটি অত্যন্ত নৃশংস ঘটনা। সাইফুলকে বিচারকাজের সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয়, যা সরাসরি আদালতের প্রাঙ্গণে সংঘটিত হয়। স্থানীয়রা জানান, সাইফুলকে আদালতের বাইরে রঙ্গম হলের সামনে টেনে নিয়ে গিয়ে আক্রমণ করা হয়, এবং এরপর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এটি এমন একটি ঘটনা, যা পুরো সমাজের জন্য একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন রেখে গেছে, বিশেষ করে বিচারব্যবস্থার নিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের প্রতি আমাদের আস্থা কতটা প্রগাঢ়।
এটি শুধু সাইফুলের পরিবারকে এক গভীর শোকে নিমজ্জিত করেছে, তা নয়, সমগ্র সমাজের জন্যও একটি বড় ঝুঁকির সংকেত। বিচারকাজ এবং আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন আরও জরুরি হয়ে পড়েছে, কারণ এমন নৃশংস ঘটনা বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। সাইফুলের হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবার এবং সমাজের উপর যে মানসিক চাপ পড়েছে, তা এক দীর্ঘ সময়ের জন্য টানটান হয়ে থাকবে।
এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি এবং অন্যান্য সংগঠনও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। হত্যাকারীদের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজে আইনের শাসন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি। সাইফুলের মতো একজন আইনজীবীর মৃত্যু যে কেবল তার পরিবারকেই নয়, সারা সমাজকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।