সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির অপচেষ্টা চলছে: তারেক রহমান
তারেক রহমানের বক্তৃতায় কয়েকটি প্রধান বিষয় উঠে এসেছে, যেগুলো বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার প্রক্রিয়া, এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো:
১. সংস্কার এবং নির্বাচন:
- তারেক রহমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, সংস্কার আগে নির্বাচন হওয়ার প্রশ্ন তুললে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলছেন যে সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা একাধিকার স্থায়ী নয়। এর মানে, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সংস্কার শেষ হবে না, বরং তা সবার অংশগ্রহণে চলতে থাকবে।
- বিএনপি মনে করে, নির্বাচন এবং সংস্কার দুটোই প্রয়োজন, তবে নির্বাচন হতে হবে “যৌক্তিক সময়ের মধ্যে”। এটা একটি সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে জনগণ তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করে স্বৈরাচারী শক্তিকে পরাজিত করতে পারে।
২. গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি:
- তারেক রহমানের মতে, একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য জনগণের নিত্যদিনের সমস্যা সমাধান করা জরুরি। শুধু পুঁথিগত সংস্কার নয়, জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হলে কোনো সংস্কার কার্যকর হবে না।
- বিএনপি মনে করে, রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নতি ছাড়া বাস্তবিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। এর মধ্যে বিশেষভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের জন্য মানবিক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে।
৩. স্বৈরাচারের পুনর্বাসন ঠেকানো:
- তারেক রহমান পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন না হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই স্বৈরাচারী শক্তি আবারও বাংলাদেশের রাজনীতিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
- এ জন্য দুটি পদক্ষেপ সুপারিশ করেছেন: একদিকে, তাদের বিচার নিশ্চিত করা এবং অপরদিকে, জনগণের রাজনৈতিক বিচারে তাদের প্রত্যাখ্যান করা।
৪. গণমাধ্যমের ভূমিকা:
- গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে তারেক রহমান গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ফ্যাসিবাদী আমলে গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল এবং এ কারণে জনগণের জন্য সঠিক তথ্য পাওয়ার সুযোগ কমে গিয়েছিল।
- গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বহুমুখিতা পুনঃস্থাপন জরুরি বলে তিনি মনে করেন, যা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য অপরিহার্য।
৫. আওয়ামী লীগের সমালোচনা:
- তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের আগের স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ এবং ২০২৪ সালের আগের আওয়ামী লীগ শাসনকাল দেখিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ নয়।
৬. নির্বাচনের গুরুত্ব:
- তারেক রহমান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে সক্ষম হবে।
৭. সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান:
- ফ্যাসিবাদী শাসনের সময়ে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বাসনের বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।
তারেক রহমানের এই বক্তব্য রাজনৈতিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রমাণিত করে যে বিএনপি আগামী নির্বাচনে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষপাতী, কিন্তু সেই সংস্কারের পাশাপাশি অবাধ নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তারা কেবলমাত্র শব্দে নয়, কার্যক্রমে বাস্তবায়িত করতে চায়। এর মাধ্যমে তিনি একদিকে বিএনপির সংকল্প ব্যক্ত করেছেন, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে তা জনগণের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
তারেক রহমানের কথায় যে নির্বাচনের গুরুত্ব এবং জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কথা তুলে ধরা হয়েছে, তা বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য একটি সরাসরি কৌশলগত আহ্বান। নির্বাচনে জনগণের সঠিক ভোট এবং সেই ভোটের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে বিএনপি নিশ্চিত, যা মূলত তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত।
তারেক রহমানের বক্তব্যে সংস্কারের পাশাপাশি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। এটা নিশ্চিতভাবেই বিএনপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দর্শন, যেখানে জনগণের মৌলিক দিকগুলো—যেমন খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, এবং দুর্দশার অবসান—এবং রাজনৈতিক সংস্কারের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করতে চাওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রতি তারেক রহমানের আহ্বান অনেকটাই বিপ্লবী। বিশেষ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বস্তুনিষ্ঠতার দিকে নজর দিলে, তার বক্তব্য দেশের সাংবাদিকতা এবং গণতন্ত্রের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
তারেক রহমানের বক্তব্য রাজনৈতিক এবং কৌশলগতভাবে খুবই সুপরিকল্পিত। এটি বিএনপির শক্তির পুনর্গঠন, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের প্রতি এক গভীর অঙ্গীকারের প্রতীক হতে পারে।