মোল্লা কলেজ, কবি নজরুল-সোহরাওয়ার্দীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, লুটপাট
এই ঘটনার পটভূমি এবং বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ঢাকা শহরের কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং সহিংসতা বেড়েছে, যা একাধিক কলেজের মধ্যে উত্তেজনা এবং বিবাদ সৃষ্টি করেছে। এর মূল কারণ হলো সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর, যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ (ডিএমআরসি) এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
মূল কারণ ও ঘটনার বিশ্লেষণ:
- সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর: রবিবার সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর হয়, যার ফলে ওই কলেজের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা মোল্লা কলেজের সামনে এসে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এটি ছিল এক ধরণের ‘পাল্টা প্রতিক্রিয়া’, যেখানে হামলার নিন্দা এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী শিক্ষার্থীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
- সংঘর্ষের ধরণ: দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল ছোড়া, ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে। মোল্লা কলেজের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করার খবর পাওয়া গেছে। মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের রক্ষা করতে গেট বন্ধ করে রাখলেও তারা অন্য পক্ষের আক্রমণের শিকার হন এবং মারধরের শিকার হন।
- আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি: এই ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল না, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সংঘর্ষের কারণে ডেমরা এলাকার সড়ক বন্ধ হয়ে যায় এবং যান চলাচল ব্যাহত হয়।
- শিক্ষার্থীদের চরম উত্তেজনা: সংঘর্ষের কারণ শুধুমাত্র এক কলেজের ওপর হামলা নয়, বরং এটি একটি ব্যাপক আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের কলেজের সম্মান রক্ষায় এবং ক্ষতির বিচার চেয়ে রাজপথে নেমেছেন। তবে, আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেকেই এই সংঘর্ষকে অপ্রত্যাশিতভাবে সহিংসতা রূপে দেখছেন এবং একে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব:
- শিক্ষার্থীদের আন্দোলন: কলেজগুলির মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়টি এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। শিক্ষার্থীদের এমন সহিংসতামূলক প্রতিক্রিয়া শিক্ষাঙ্গনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিপদে ফেলেছে।
- শান্তি বজায় রাখার জন্য আহ্বান: কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. হাবিবুর রহমান মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “শান্ত হও, তোমাদের সঙ্গে আমরা আছি”, এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তুলে ধরে সুষ্ঠু বিচারের জন্য একটি কমিটি আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
- আল্টিমেটামের প্রতি প্রতিক্রিয়া: আন্দোলনের একটি অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা আল্টিমেটাম দিয়েছিল, যার কারণে তারা এইভাবে প্রতিবাদে নেমে এসেছে। এটি একটি বড় ধরনের সাংগঠনিক প্রতিবাদ হিসেবে কাজ করেছে, যা আরও সংঘর্ষের দিকে নিয়ে গেছে।
সম্ভাব্য সমাধান:
- সুষ্ঠু বিচার এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা: এই সহিংসতার শিকার কলেজগুলির শিক্ষার্থীরা এখন প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু বিচার এবং ক্ষতির পুনরুদ্ধারের দাবি জানাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি শান্ত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি জরুরি।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সমঝোতা এবং সংলাপ: তিনটি কলেজের মধ্যে শিক্ষার্থীদের এই সংঘর্ষের ফলে একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের মধ্যে আলোচনা এবং সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করা, যাতে ভবিষ্যতে এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে না পারে।
- শিক্ষার্থীদের মানসিকতা পরিবর্তন: এই ধরনের সহিংসতায় জড়ানোর আগে শিক্ষার্থীদের বুঝানো জরুরি যে, সহিংসতা কখনোই সমস্যার সমাধান হতে পারে না, বরং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।
ঢাকার কলেজগুলোতে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা নতুন নয়, তবে এই ধরনের পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবির পক্ষে সহিংসতা অবলম্বন করছেন। তবে, এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক সমস্যার প্রতিফলনও হতে পারে, যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।