মহাকাশের গবেষণাগারে তৈরি হচ্ছে মানুষের কৃত্রিম মস্তিষ্ক
বিজ্ঞানীরা মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন (আইএসএস) ব্যবহার করে নতুন ধরনের চিকিৎসার উপায় উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করছেন। এই গবেষণার মধ্যে অন্যতম হল মানব মস্তিষ্কের অর্গানয়েড তৈরি করা, যা বিশেষভাবে আলঝেইমার, পারকিনসন, এবং মেরুদণ্ডের আঘাতের চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
অর্গানয়েড হচ্ছে এমন একটি কৃত্রিম কোষের সমষ্টি, যা মানব অঙ্গের গঠন এবং কার্যকারিতা অনুকরণ করে। এর মাধ্যমে স্নায়বিক রোগগুলোর নতুন চিকিৎসার উপায় খোঁজা হচ্ছে। বায়োটেকনোলজি কোম্পানি অ্যাক্সোনিস থেরাপিউটিকস এই পরীক্ষা পরিচালনা করছে, যেখানে ভাইরাল ভেক্টর নামক একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ভাইরাল ভেক্টর পরিবর্তিত ভাইরাস, যা বিশেষ জিন থেরাপি পৌঁছাতে সহায়তা করে, স্নায়ুতন্ত্রের কোষের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য কাজে আসে।
মহাকাশে গবেষণার সুবিধা: পৃথিবীতে মস্তিষ্কের কোষ বৃদ্ধি করার সময় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তবে, মহাকাশে মাইক্রোগ্রাভিটি (শূন্য মাধ্যাকর্ষণ) থাকায় কোষগুলো বৃদ্ধি এবং পরীক্ষার প্রক্রিয়া সহজ হয়। এতে মানব মস্তিষ্কের অর্গানয়েড দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং উন্নত গবেষণার সুযোগ তৈরি হয়।
২০২৩ সালের আগস্টে, অ্যাক্সোনিস থেরাপিউটিকস তাদের ভাইরাল ভেক্টর এবং স্নায়ুকোষগুলো আইএসএস-এ প্রেরণ করে। সেখানে বায়োসেল নামক একটি মেশিনে এসব কোষ রাখা হয়, যা কোষ গঠনের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। নাসার মহাকাশচারী মাইক ব্যারাট এই গবেষণায় অংশ নিয়ে মস্তিষ্কের অর্গানয়েড নমুনাগুলি পরীক্ষা করেন এবং জিন থেরাপি সংক্রান্ত পরীক্ষা চালান।
এর ফলে, মহাকাশে খুব কম সময়ে মানব মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি সম্ভব হয়েছে। এই গবেষণার সফলতা স্নায়বিক রোগের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে, যা ভবিষ্যতে মানুষের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে।