December 22, 2024
পোশাকশিল্পে কমে আসছে নারী শ্রমিক

পোশাকশিল্পে কমে আসছে নারী শ্রমিক

নভে ২৫, ২০২৪

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প, যা জাতীয় রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস, বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকটের মুখোমুখি। পোশাক কারখানাগুলোতে নারী শ্রমিকদের সংখ্যা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় বিপদ সংকেত। ১৯৮০ সালে যেখানে এই শিল্পে নারী শ্রমিকদের হার ছিল ৮০ শতাংশ, ২০২১ সালে তা নেমে এসেছে ৫৩.৭ শতাংশে। এই পরিবর্তনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যা শিল্পের স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

১. নারী শ্রমিকদের শ্রম বাজারে পরিবর্তন

পোষাক শিল্পে নারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বয়সসীমা ছিল ১৮ থেকে ৩৫ বছর। কিন্তু বয়স ৩৫ পেরোলেই তারা এই কাজ ছেড়ে অন্য বিকল্প পেশার দিকে ঝুঁকছেন, বিশেষত কৃষি, গৃহস্থালী কাজ এবং নিজস্ব দর্জির দোকান পরিচালনার দিকে। এর কারণ মূলত অস্থিরতা, উচ্চ আয় এবং স্বাধীন পেশার প্রতি আকর্ষণ। এই পরিবর্তন সরাসরি কারখানার দক্ষ শ্রমিকের সংকট তৈরি করছে, যা উৎপাদন ক্ষমতা এবং রপ্তানি আয়ের উপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

২. দক্ষ শ্রমিক সংকট এবং উৎপাদনশীলতার হুমকি

নারী শ্রমিকদের অভাব উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতার অভাব তৈরি করতে পারে, যা রপ্তানি আয়ের শীর্ষে থাকা পোশাক শিল্পে স্থবিরতা আনতে পারে। এমনকি টেকসই উন্নয়ন এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে সমস্যা হতে পারে, কারণ পোশাক খাতের জন্য প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ শ্রমিকদের প্রতি আকর্ষণ কমছে।

৩. নারীবান্ধব কর্মপরিবেশের প্রয়োজনীয়তা

এভাবে নারী শ্রমিক কমে গেলে তাদের ফিরে আনার জন্য কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নিরাপদ এবং নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন এবং সঠিক সময়ে ন্যায্য মজুরি প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।

৪. আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি

বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং ডিকার্বোনাইজেশন বা কার্বন নির্গমন কমানোর প্রক্রিয়া পোশাক খাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর, টেকসই জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে হলে বাংলাদেশকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল উৎপাদন পদ্ধতির প্রতি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা জরুরি।

৫. পোশাক শিল্পের গুরুত্ব এবং দেশের অর্থনীতি

পোশাক শিল্পের অবদান বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অমূল্য। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জাতীয় জিডিপিতে ১০.৩৫ শতাংশ অবদান রেখেছে। এই শিল্পে ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে। কাজেই এই খাতে নারী শ্রমিকের অভাব এবং অন্যান্য সমস্যার সমাধান না করা হলে দেশের অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় ঘটতে পারে

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে হলে নারীদের এই শিল্পে আগ্রহী করা জরুরি। এর জন্য, নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা, মজুরি কাঠামো এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য সঠিক কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যদি এসব সমস্যা সমাধান না করা হয়, তবে বাংলাদেশের পোশাক খাত এবং দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।

Leave a Reply