দাবায় প্রাইজমানি বাড়েনি বরং কমেছে
বাংলাদেশের দাবা খেলার বর্তমান অবস্থা একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি প্রতিফলিত করছে, যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন সত্ত্বেও দেশীয় দাবাড়ুরা যথাযথ সুবিধা পাচ্ছে না। এই চিত্রটি দাবার প্রতি উদাসীনতা, কম পৃষ্ঠপোষকতা এবং অনিয়মিত প্রতিযোগিতার কারণে আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
১. দেশীয় প্রতিযোগিতায় ফান্ড সংকট এবং প্রাইজমানির কমানো
ফান্ড সংকটের কারণে জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার পুরস্কারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক সময় যে চ্যাম্পিয়নদের জন্য ১ লাখ টাকা পুরস্কার ছিল, তা বর্তমানে মাত্র ৪০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। এছাড়া, নারীদের জন্য পুরস্কারও অসম্মানজনকভাবে কমানো হয়েছে, যা বৈষম্যের উদাহরণ। যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের দাবার প্রাইজমানি বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে, সেখানে বাংলাদেশে তা কমেছে।
২. বিদেশী টুর্নামেন্টের উচ্চ খরচ
দেশীয় দাবাড়ুরা বিদেশে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে গেলে বিমান ভাড়া, থাকার খরচসহ অনেক টাকা খরচ হয়, যা অনেক খেলোয়াড়ের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। আন্তর্জাতিক মাস্টার মনন রেজা নীড় এবং নারী জাতীয় চ্যাম্পিয়ন নোশিন আঞ্জুমের মত দাবাড়ুদের মতে, যদি দেশেই এসব টুর্নামেন্ট আয়োজন করা সম্ভব হতো, তবে খরচ অনেক কমে আসতো এবং বাংলাদেশের দাবাড়ুদের আন্তর্জাতিক মান উন্নয়ন সহজ হতো। ২০২১ সালে বাংলাদেশে দুটি গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছিল, যা খেলোয়াড়দের জন্য খুবই উপকারী ছিল।
৩. নতুন কমিটির ভূমিকা
বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন কমিটি দাবি করেছে যে, তারা দাবাড়ুদের চাওয়াগুলো শুনে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করবে। তবে ফেডারেশনের দেনা পরিশোধ করার ব্যাপারটি একটি বড় বাধা। ফিদে (FIDE) বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের কাছ থেকে ১৮ হাজার ইউরো বকেয়া রেখেছে, যা পরিশোধ করতে হবে। এজন্য নতুন কমিটিকে দুটি প্রধান বিষয় বাস্তবায়ন করতে হবে:
- টুর্নামেন্টের আয়োজন: দেশের ভিতর নিয়মিত আন্তর্জাতিক মানের দাবা টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যবস্থা।
- প্রাইজমানির উন্নতি: বিশেষ করে নারীদের প্রাইজমানি বাড়ানো এবং পুরস্কারের পরিমাণ বৃদ্ধি করা।
৪. সমস্যার মূল কারণ
এই সমস্যাগুলোর মূল কারণ হচ্ছে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার অভাব এবং ফান্ডের অপ্রতুলতা। দেশের ক্রীড়া খাতে একযোগিতার অভাব এবং অর্থনৈতিক সংকট বড় সমস্যা হিসেবে কাজ করছে। দাবা খেলা যদিও মানসম্পন্ন খেলোয়াড় তৈরি করছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তাদের প্রতিভা বিকাশের জন্য যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, তা অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।
বাংলাদেশের দাবা খেলোয়াড়দের উন্নতির জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত পরিকল্পনা, যেখানে আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্ট আয়োজন, প্রাইজমানি বৃদ্ধি, এবং খেলোয়াড়দের জন্য ভালো পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করা হবে। যদি এসব পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে কেবল বিদেশে সাফল্য অর্জন করা, দেশের অভ্যন্তরে দাবার পরিবেশের উন্নতি ঘটানো সম্ভব হবে না।