December 23, 2024
অক্টোবর মাসে ৪৫২ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৫

অক্টোবর মাসে ৪৫২ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৫

নভে ২৩, ২০২৪

গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সংগঠিত দুর্ঘটনা এবং তার ফলে প্রাণহানি ও আহতের পরিসংখ্যান অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের চলমান সড়ক নিরাপত্তার অভাব এবং অন্যান্য বাহন ব্যবস্থার অদক্ষতার ইঙ্গিত দেয়।

১. দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি:

  • সড়ক দুর্ঘটনা: ৪৫২টি দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত এবং ৮১৫ জন আহত হয়েছেন। এটি মোট দুর্ঘটনার ৮৪.৫ শতাংশ।
  • রেলপথ দুর্ঘটনা: ৬৩টি দুর্ঘটনায় ৭৬ জন নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন।
  • নৌপথ দুর্ঘটনা: ১৯টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ৩৬ জন আহত এবং ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

মোট দুর্ঘটনা: ৫৩৪টি দুর্ঘটনায় ৫৭৫ জন নিহত এবং ৮৭৫ জন আহত হয়েছে। মোট মৃত্যুর প্রায় ৩৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটেছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

২. মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা:

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাগুলি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ:

  • মোট দুর্ঘটনার ৩০.৫৩ শতাংশ মোটরসাইকেলের কারণে হয়েছে।
  • এতে নিহত ১৬৩ জনের মধ্যে মোট নিহতের ৩৪.৩১ শতাংশ এবং আহত ২৯.৩২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সড়ক নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ অনেক দুর্ঘটনার মূল কারণেই অদক্ষতা এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা রয়েছে।

৩. যানবাহনগুলির ভূমিকা:

যানবাহনের ধরন অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রবণতা কিছুটা আলাদা:

  • মোটরসাইকেল: ২৪.৪১%
  • ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি: ২২.৫০%
  • বাস: ১৮.৫৪%
  • ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক: ১৭.৯১%

৪. দুর্ঘটনার কারণ:

সড়ক দুর্ঘটনার কিছু প্রধান কারণ রয়েছে:

  • ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতি: বিশেষ করে জাতীয় মহাসড়কে পুলিশ বাহিনীর প্রভাবশালী উপস্থিতির অভাব, যা সড়ক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে।
  • রোড সাইন এবং সড়ক মার্কিংয়ের অভাব: জাতীয় মহাসড়কে সঠিক সড়ক চিহ্ন, সড়কবাতি ও সড়কের গর্তগুলি দুর্ঘটনার মূল কারণ।
  • অদক্ষ চালক: সড়কে বড় একটি অংশই অদক্ষ এবং অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত চালক দ্বারা চালিত হয়।
  • অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন: অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

৫. দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশ:

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা রোধে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে:

  • মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি বন্ধ: ছোট যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং বিশেষ করে যেগুলি দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাদের নিবন্ধন বন্ধ করা।
  • আলোকসজ্জা ও সড়ক উন্নয়ন: রাতের বেলায় সড়কে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা এবং সড়ক নির্মাণ ও মেরামত কাজের মান নিশ্চিত করা।
  • নতুন চালক তৈরির উদ্যোগ: দক্ষ চালক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বৃদ্ধি করা এবং ডিজিটাল ফিটনেস পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা।
  • ফুটপাত ও পথচারী পারাপার: সড়কে ফুটপাত এবং পথচারীদের জন্য পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, যাতে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

৬. সড়ক নিরাপত্তা ও বিআরটিএ:

একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে, বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) এর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত রোড সেফটি অডিটের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রমের মনিটরিং করা। সড়ক নিরাপত্তা সংস্কার ও নিয়মিত পরিদর্শন বাড়াতে হবে, যাতে দুর্ঘটনার হার কমানো সম্ভব হয়।

এই পরিসংখ্যান এবং সুপারিশগুলি স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করছে যে সড়ক নিরাপত্তা ও নিয়ম-নীতি বাস্তবায়ন নিয়ে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। বিশেষত, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও সড়কে চাঁদাবাজির মত সমস্যা মোকাবেলা করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। সড়ক ও যানবাহন ব্যবস্থার মানোন্নয়ন, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক তৎপরতা এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Leave a Reply