ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষরা ছিলেন ক্যামেরুনের
ব্রাজিলের ফুটবল তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গোল্ডেন রুটস কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাঁর পূর্বপুরুষদের শেকড় অনুসন্ধান একটি বিশেষ মুহূর্ত তৈরি করেছে, যা শুধুমাত্র ব্রাজিলের ফুটবল বা ভিনিসিয়ুসের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং কৃষ্ণাঙ্গ সচেতনতা দিবস ও আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানানো এক বিশেষ উদ্যোগ।
গোল্ডেন রুটস কার্যক্রম এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়র:
ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) “গোল্ডেন রুটস” কার্যক্রমটি কৃষ্ণাঙ্গ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে শুরু করেছে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল খেলোয়াড়দের বংশগত শেকড় অনুসন্ধান করা। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র তাঁর পূর্বপুরুষদের শেকড় সম্পর্কে জানতে ডিএনএ পরীক্ষা করান। এবং জানা যায়, তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন ক্যামেরুনের টিকার গোত্র থেকে, যারা মধ্য আফ্রিকার এক গুরুত্বপূর্ণ জাতিগোষ্ঠী। এই আবিষ্কারটি শুধু ভিনিসিয়ুস বা ব্রাজিলের জন্যই নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক তাৎপর্য বহন করে, যেখানে আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান জনগণের ইতিহাস ও অবদানকে পুনরায় উদ্যাপন করা হয়েছে।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের শেকড় এবং তার মানে:
ভিনিসিয়ুসের ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, তিনি ক্যামেরুনের টিকার গোত্র থেকে আগত। টিকার জাতিগোষ্ঠী আফ্রিকার এক বিশিষ্ট জাতি, যাদের শিল্পকলা ও গল্প বলার দক্ষতা পৃথিবীজুড়ে পরিচিত। তাদের আদি নিবাস ছিল নীল নদীর উপত্যকায়, যা বর্তমানে সুদানের অংশ। এর মাধ্যমে ভিনিসিয়ুস শুধুমাত্র নিজের শেকড় খুঁজে পাননি, বরং আফ্রিকান বংশোদ্ভূত অনেক ফুটবলারের পিতৃ-মাতৃ পরিচয়ও সন্ধান পেয়েছে, যাদের বংশগতি ক্রীতদাস প্রথা এবং বর্ণবাদের কারণে হারিয়ে গিয়েছিল।
সিবিএফ-এর সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ বলেছেন, ‘‘ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে উদ্যাপন করা মানে শুধু ব্রাজিলিয়ানদের অর্জনকে উদ্যাপন করা নয়, এটি আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান সংস্কৃতির মৌলিক প্রভাবক হিসেবেও কাজ করে।’’
কৃষ্ণাঙ্গ সচেতনতা দিবস:
২০ নভেম্বর, ব্রাজিলে কৃষ্ণাঙ্গ সচেতনতা দিবস পালিত হয়। এই দিনটি ব্রাজিলের কৃষ্ণাঙ্গ সমাজের অবদান উদ্যাপন ও তাদের প্রতি সম্মান জানাতে ব্যবহৃত হয়। এটি কুইলোমবোলাদের নেতা জুম্বি-এর স্মরণে পালিত হয়, যিনি ক্রীতদাসপ্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন এবং ২০ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। ১৯৬০-এর দশক থেকে দিবসটি পালিত হলেও, ২০১১ সালে সরকার ২০ নভেম্বরকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই দিনটি কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাস, সংগ্রাম এবং তাদের ভূমিকা সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।
ব্রাজিলের আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান সাংস্কৃতিক প্রভাব:
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবং অন্যান্য আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের শেকড় অনুসন্ধান প্রক্রিয়া ব্রাজিলে আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের সাংস্কৃতিক অবদান এবং ইতিহাসকে আরো গুরুত্ব দেয়। ব্রাজিলের ফুটবল, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, এবং প্রতিদিনের জীবনেও আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান জনগণের প্রভাব গভীর। এমনকি ব্রাজিলের জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা নিজস্ব বংশের শেকড় অনুসন্ধান করে তাদের আফ্রিকান ঐতিহ্য ও পরিচয়ের প্রতি সম্মান জানাচ্ছেন, যা সমাজে এক নতুন ধরনের সাংস্কৃতিক সচেতনতা তৈরি করছে।
বিশ্ব ফুটবলে আফ্রো-ব্রাজিলিয়ানদের অবদান:
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবং অন্যান্য তারকা ফুটবলারের মাধ্যমে ব্রাজিলের আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান ঐতিহ্য এবং কালচারের প্রতি সম্মান জানানো হচ্ছে, যা ব্রাজিলের সমাজের বহুমাত্রিক চরিত্র এবং ঐতিহ্যকে পুনর্ব্যক্ত করে। আফ্রিকার সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ক্রীতদাসপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্মৃতি আজও ব্রাজিলের ফুটবল, সংগীত, শিল্পকলা ও ভাষায় জীবন্ত।
ব্রাজিলের ফুটবল কনফেডারেশনের গোল্ডেন রুটস কার্যক্রম এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের শেকড় অনুসন্ধান এক নতুন দৃষ্টিকোণ তৈরি করেছে। এই উদ্যোগ শুধুমাত্র ফুটবল ক্রীড়াক্ষেত্রেই নয়, বরং সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনেরও অংশ হয়ে উঠেছে। এটি ব্রাজিলের আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান সম্প্রদায়ের ইতিহাস এবং তাদের অবদানকে সম্মান জানিয়ে পুরো বিশ্বকে আফ্রিকান ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি সচেতন করার একটি বড় পদক্ষেপ।