একাত্তরে ভুল করে থাকলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইব: জামায়াত আমির
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের বিবৃতি: একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা এবং ক্ষমা প্রার্থনা
যুক্তরাজ্য সফরে থাকা জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-এ জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ থাকলে এবং তা প্রমাণিত হলে তিনি জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। বুধবার লন্ডনের পূর্ব লন্ডনে বাংলাভাষী সংবাদমাধ্যমে অনুষ্ঠিত এক ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। তাঁর এই বক্তব্যটি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।
জামায়াতের ১৯৭১ সালের অবস্থান:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে পাকিস্তানের অবস্থান ছিল। জামায়াতের তৎকালীন নেতারা শান্তি কমিটিতে সদস্য ছিলেন এবং দলটির নেতা-কর্মীরা রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীতে যুক্ত ছিলেন, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ে এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়ে আসছে যে, তারা রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, কিন্তু দলটির নেতা-কর্মীরা সরাসরি বাঙালি হত্যাকা- বা যুদ্ধাপরাধ-এ জড়িত ছিলেন না। জামায়াতের দাবি, তাদের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অযৌক্তিকভাবে আনা হয়েছে এবং তাদের দণ্ডাবধির বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে।
শফিকুর রহমানের বক্তব্য:
শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের বিচারপতিরা মন্তব্য করেছেন যে, “এটি ছিল ‘জেনোসাইড অব জাস্টিস’” (ন্যায়বিচারের জাতিগত নিধন)। তিনি দাবি করেন, জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে যে বিচার হয়েছে তা ন্যায়সঙ্গত নয় এবং এটি রাজনীতির ফল।
ডা. শফিকুর রহমান এ সময় জামায়াতের ওপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে জামায়াতকে কার্যালয়ে বসতে, কথা বলতে, সভা-সমাবেশ করতে, এমনকি শোভাযাত্রা পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। ফলে জামায়াত নেতারা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জাতির কাছে তাদের অবস্থান তুলে ধরতে পারেননি।
শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি:
ডা. শফিকুর রহমান মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার-এর কাছে একটি দাবি তুলে ধরেন, যা হলো শহীদ ছাত্র-জনতার জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের অভ্যুত্থানে দেশব্যাপী বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল এবং প্রবাসীরা তাদের সাধ্য অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন। তিনি এ বিষয়ে সরকারের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
দুর্নীতি এবং দেশের অবস্থা:
শফিকুর রহমান দুর্নীতি-কে দেশের জন্য জাতীয় লজ্জা বলে আখ্যা দেন এবং যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে দুর্নীতি থেকে অনেকটা মুক্ত হয়ে তারা মর্যাদাপূর্ণ স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। তবে, তিনি মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের জন্য একই ফলাফল পাওয়া যায়নি।
উপস্থিত অন্যান্য ব্যক্তিরা:
মিট দ্য প্রেস-এ জামায়াতের ইউরোপ শাখার মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।
ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য জামায়াতের ১৯৭১ সালের ভূমিকা এবং বিচারের পরিণতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূচনা করেছে। তার ক্ষমা প্রার্থনার বক্তব্য এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতের ভূমিকার বিষয়টি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। তবে, জামায়াতের প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের সঠিকতা নিয়ে বিতর্ক এখনও চলমান রয়েছে।