December 23, 2024
আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, আটকে গেল গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, আটকে গেল গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

নভে ২১, ২০২৪

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব উঠেছিল, যার বিপক্ষে আবারও ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বানে ওঠা মোট চারটি প্রস্তাবের মধ্যে এই প্রস্তাবও ছিল, যেটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ভেটো করেছে।

বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য ১৪ দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো প্রস্তাবটির বাস্তবায়ন বন্ধ করে দিয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী ১০ সদস্য দেশ গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের আহ্বান জানাতে একটি খসড়া প্রস্তাব তুলে রেখেছিল। প্রস্তাবটি যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবি করেছিল।

এই প্রস্তাবটির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সময় জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের উপদূত রবার্ট উড মন্তব্য করেছেন, “আমরা স্পষ্ট করেছি যে, যেকোনো প্রস্তাবকে আমরা সমর্থন করতে পারি না যা জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমেই যুদ্ধবিরতি সম্ভব।”

এদিকে, ফিলিস্তিনের জাতিসংঘে নিযুক্ত উপদূত মাজেদ বামেয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “একটি যুদ্ধবিরতি হয়তো সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, কিন্তু এটি যেকোনো সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।”

  1. ভেটোর রাজনৈতিক প্রেক্ষিত: যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির আহ্বানে ভেটো দেওয়া, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির সঙ্গে জিম্মি মুক্তির দাবি থাকা সত্ত্বেও, একটি পরবর্তী পর্যায়ে পরিস্থিতির আরও সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট যে, তারা যুদ্ধবিরতির চেয়ে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে চায়, যা একটি নতুন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে।
  2. আন্তর্জাতিক উত্তেজনা: এর ফলে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। যেহেতু, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একাধিক দেশ যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো সেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
  3. ফিলিস্তিনের প্রতিক্রিয়া: ফিলিস্তিনের দৃষ্টিকোণ থেকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো যুদ্ধবিরতির পথকে আরও কঠিন করে তুলেছে। মাজেদ বামেয়ার মন্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কারণ এটি দীর্ঘকালীন শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে তুর্কি, কাতারি বা মিশরীয় মধ্যস্থতায় আলোচনার সুযোগ খুলে যেতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাখ্যাত প্রস্তাবে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান:

যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো প্রমাণ করেছে যে, তাদের জন্য যুদ্ধবিরতির চেয়ে ইসরায়েলি নিরাপত্তা এবং জিম্মিদের মুক্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে এই অবস্থানকে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলি মিত্রতা ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা হিসেবে দেখানো হচ্ছে, অন্যদিকে এটি ফিলিস্তিন এবং আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে মার্কিন অবস্থানকে আরও সংকুচিত করছে।

ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট:

ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে আসন্ন সময়ের মধ্যে আরও প্রতিবাদ এবং আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে আরব বিশ্ব এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে। পাশাপাশি, জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ক্রমবর্ধমান সমর্থন পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলবে।

এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি পরিস্থিতি নিয়ে নতুন কোনো সমঝোতার সুযোগ সৃষ্টি না করে, তবে আরও বৃহত্তর আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে পড়তে পারে।

Leave a Reply