December 23, 2024
ক্ষমতায় বসে দুর্নীতি-হত্যাসহ ১৬ মামলায় দায়মুক্ত হন শেখ হাসিনা

ক্ষমতায় বসে দুর্নীতি-হত্যাসহ ১৬ মামলায় দায়মুক্ত হন শেখ হাসিনা

নভে ২০, ২০২৪

এই লেখাটিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ওঠা অভিযোগ ও মামলাগুলির বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে, যা তার রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বিতর্কিত দিক হিসেবে উঠে আসে। লেখাটি মূলত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, হত্যা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অন্যান্য অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করেছে, যেগুলোর অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত আদালতে বাতিল বা প্রত্যাহার করা হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞরা শেখ হাসিনার বিচারিক দায়িত্ব থেকে কীভাবে মুক্তি পেয়েছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে থাকা এসব মামলাগুলোর রাজনৈতিক প্রভাব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন।

১. রাজনৈতিক মামলা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার:

লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ১৬টি মামলা হয়েছিল, যার মধ্যে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি এবং হত্যার অভিযোগ ছিল। এসব মামলা এবং অভিযোগের মূল বিষয় ছিল তাঁর এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও অর্থের অপচয়, এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নিপীড়ন।

যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তদন্ত হয়েছে এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তবে ২০০৮ সালের পর তিনি ক্ষমতায় আসার পর এসব মামলার অনেকগুলোই বাতিল বা প্রত্যাহার হয়ে যায়। তার শাসনামলে এই মামলাগুলোর অবসান ঘটে, যা রাজনৈতিকভাবে অনেকেই ফ্যাসিবাদী শাসনের অংশ হিসেবে দেখেন।

২. মামলা প্রত্যাহারের পদ্ধতি:

আলোচ্য লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন মামলায় বিশেষত তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মামলাগুলোর পরবর্তী কার্যক্রমে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল বিভিন্ন ব্যবসায়ীর দায়ের করা চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মামলা, যা সরকার গঠন করার পরই প্রত্যাহার করা হয়।

৩. মামলা বাতিলের আইনগত প্রক্রিয়া:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে বেশ কিছু মামলা আদালতে বাতিল হয়, বিশেষত হাইকোর্ট থেকে। উদাহরণস্বরূপ, দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে করা ১০টি মামলার মধ্যে বেশিরভাগই হাইকোর্টে বাতিল হয়েছে। এছাড়া, একাধিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের মামলা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে যে, শাসক দলের পক্ষ থেকে এই মামলাগুলোর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে এক ধরনের দায়মুক্তি পাওয়া গেছে।

৪. বিশেষ বিচারিক ব্যবস্থা এবং তার প্রভাব:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিশেষ মামলা যেমন, বিদেশি জ্বালানি কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে সম্পর্কিত দুর্নীতি এবং বিভিন্ন সামরিক প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগও উঠেছিল। তবে এসব মামলাতেও হাইকোর্ট বা নিম্ন আদালতের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি, বা এগুলো বাতিল হয়ে যায়। আদালতের প্রক্রিয়া এবং বিচারিক ব্যবস্থার উপর তার রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টি প্রকাশ পায়।

৫. রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট:

এ লেখায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো শুধু আইনগতভাবে নয়, রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে বড় ধরনের প্রশ্ন তোলে। বিরোধী দল এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে ফ্যাসিবাদী শাসন বা ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো এবং তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে অস্থিরতা এবং ক্ষমতার কেন্দ্রিক বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে।

৬. ফলস্বরূপ সংকট:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এসব মামলার বিচার না হওয়া, কিংবা পরে বাতিল হয়ে যাওয়ার ঘটনায় অনেকের কাছে মনে হতে পারে যে, তিনি নিজের শাসনামলের মধ্যে বিচারিক ব্যবস্থা এবং আইনের শাসনকে প্রভাবিত করেছেন। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি দলের পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী কৌশল হিসেবে দেখা হতে পারে, কিন্তু বিরোধী দল এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এটিকে “ফ্যাসিবাদ” এবং “আইন-শৃঙ্খলার অবনতি” হিসেবে দেখতে পারেন।

৭. সামগ্রিক অবস্থান এবং পরিণতি:

এই ধরনের মামলা এবং তাদের বাতিল হওয়ার প্রক্রিয়া রাজনৈতিক অঙ্গনে শেখ হাসিনার চিত্রকে একদিকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করে, তেমনি ক্ষমতায় আসার পর তাঁর পক্ষে শাসন চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই মামলা বাতিল হওয়ার প্রক্রিয়া তাকে রাজনীতির ‘মাস্টার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, এ ধরনের পরিস্থিতি রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে, যেখানে বিরোধী দল এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে বিতর্ক এবং হতাশা বৃদ্ধি পায়।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এসব মামলা, তাদের তদন্ত, বাতিল হওয়া, এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি এর মাধ্যমে বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ একটি বিস্তৃত আলোচনা তৈরি হয়। এসব মামলার প্রভাব শুধুমাত্র বিচারিক প্রক্রিয়ার ওপর সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অবস্থান, তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কৌশল, এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলে।

Leave a Reply