গাজায় ত্রাণবাহী লরি লুট: মানবিক সংকটের নতুন অধ্যায়
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ১০৯টি ত্রাণবাহী লরি লুট করা হয়েছে। লুটপাটের ঘটনাটি ঘটেছে যখন ত্রাণের লরিগুলো ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত কেরেম শালম ক্রসিং দিয়ে পার হচ্ছিল। ত্রাণবাহী লরির চালকদের বন্দুকের মুখে ভয় দেখিয়ে সেগুলো খালি করে নেওয়া হয়। তবে, লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের সঠিক পরিচয় জানা যায়নি।
১. ত্রাণবাহী লরি লুটের ঘটনা:
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত কেরেম শালম ক্রসিং দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ত্রাণবাহী ৯৭টি লরি লুট হয়ে গেছে। ত্রাণবাহী গাড়িগুলোতে থাকা খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্য সামগ্রী দস্যুরা উদ্ধার করে নেয়। মুখোশপরা দুর্বৃত্তরা গ্রেনেড ছুড়ে লরি হামলা চালিয়ে এসব ত্রাণ লুট করেছে। এ সময় চালকদের হুমকি দিয়ে ত্রাণ সরিয়ে নেওয়া হয়।
২. গাজার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি:
ইউএনআরডব্লিউএ-র কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি জানিয়েছেন, গাজার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করা এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “গাজার পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে অপরাধী দলগুলো এবং স্থানীয় পরিবারগুলো একে অপরকে মোকাবেলা করছে, ত্রাণ সাহায্য নেওয়া ও সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।”
৩. হামাসের প্রতিক্রিয়া:
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ত্রাণবাহী লরি লুটের ঘটনায় তাদের নিরাপত্তা বাহিনী ২০ জনেরও বেশি অপরাধী সদস্যকে হত্যা করেছে। এটি একটি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ ছিল, যা ওই অপরাধী দলের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে।
৪. মানবিক সংকট ও খাদ্য সংকট:
ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, গাজায় বর্তমানে ২০ লাখ মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। যদি দ্রুত হস্তক্ষেপ করা না হয়, তবে খাদ্য সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠবে এবং হাজার হাজার মানুষ আরও বড় বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।
৫. ইসরায়েলের ভূমিকা:
গাজার ত্রাণবাহী লরির লুট হওয়ার ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে রয়টার্স সহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছিল। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাড়াহুড়ো করে কেরেম শালম থেকে ওই ত্রাণবাহী লরিগুলোকে অচেনা একটি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়, যা পরে লুটের ঘটনা সামনে আনে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
৬. গাজার অপরাধী দলগুলোর সংঘর্ষ:
ফিলিপ লাজারিনি আরো বলেন, গাজার পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে স্থানীয় অপরাধী দল এবং পরিবারের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে, তাদের ব্যবসা বা কোনো কার্যক্রমের দখল নেওয়ার জন্য। এটি একটি অস্তিত্বমূলক সংকট, যেখানে ত্রাণ কর্মীদের নিরাপত্তা এবং কার্যক্রম পরিচালনা করা দিন দিন আরো কঠিন হয়ে উঠছে।
৭. বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ:
গাজার মানবিক সংকট এবং ত্রাণ সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ আরও বাড়ছে। ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, যদি সহায়তা পৌঁছানো না যায়, তবে গাজার মানুষজন দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে পারে। এখনই দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে, গাজার সংকট একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হতে পারে।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করা এখন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। লেবাননের পরিস্থিতির মতো, গাজায়ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং সংঘাতের কারণে মানবিক সহায়তার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।