December 23, 2024
আ. লীগের সমাবেশে বাধা প্রসঙ্গে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

আ. লীগের সমাবেশে বাধা প্রসঙ্গে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

নভে ১৯, ২০২৪

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং আওয়ামী লীগের সমাবেশের ক্ষেত্রে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে উত্তর দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে, এক ভারতীয় সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাব প্রদান করেন তিনি। মিলারের মন্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ উঠে এসেছে।

এখন, এই প্রতিক্রিয়ার বিশ্লেষণ করা যাক:

১. আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সহিংসতার প্রসঙ্গ

এদিনের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সমাবেশের প্রতি সহিংস হামলার অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন যে, নারীদের ওপর হামলা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, এবং সাংবাদিকদের আটক এবং প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। মিলারের প্রতিক্রিয়া ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সমর্থন করে এবং সহিংস দমনপীড়নের বিরুদ্ধে রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা সরকারকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনগুলোর ওপর সহিংস দমন-পীড়ন আমরা চাই না।’’

এই প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির একটি প্রতিফলন। এটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে যে, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবং আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়, এবং সরকারী দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতি চাপ সৃষ্টি করার একটি চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

২. সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন এবং মানবাধিকার

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের পাশাপাশি বাংলাদেশে নানা ধর্মের সংখ্যালঘু জনগণ থাকে, এবং তাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠে আসছে। বিশেষত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

মিলারের বক্তব্যে সংখ্যালঘুদের প্রতি নির্যাতন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আন্দোলন—এইসব বিষয়গুলি নরম কণ্ঠে হলেও, একটি আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত বার্তা হিসেবে গৃহীত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে, বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে যে, তারা যেন সহিংস দমনপীড়ন থেকে বিরত থাকে এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

৩. বাংলাদেশের প্রেস স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র সাংবাদিকদের আটক এবং প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা দেশটির মিডিয়া স্বাধীনতাপ্রেস স্বাধীনতার ওপর প্রশ্ন তুলেছে। মিলার বলেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশের প্রেস স্বাধীনতার প্রতি আগ্রহী এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলেছি।’’

এটি বাংলাদেশের প্রেস স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ন অবস্থান। কোনো সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতা কিংবা শ্বাসরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দিত হয়ে থাকে, এবং এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া সম্ভবত সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই এসেছে।

৪. ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার উদ্যোগ

একটি পরবর্তী প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে। মিলার, সাংবাদিকের এই প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘তিনি বিষয়টি টুকে রাখবেন এবং এ বিষয়ে আরও খোঁজ-খবর নিবেন’’। এটি একটি সূক্ষ্ম প্রতিক্রিয়া, যেখানে তিনি বিষয়টি এখনও পর্যালোচনা করছেন বলে জানান।

এটি ইঙ্গিত করে যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি সংরক্ষণের ব্যাপারে আগ্রহী এবং সেসব উদ্যোগের প্রতি নজর রাখবে, যা সংবিধানে পরিবর্তনের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

৫. বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক চাপ

মিলারের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং মিডিয়া স্বাধীনতার খর্বকরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একদিকে যেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা ঘোলাটে হয়ে উঠছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহল থেকে বাংলাদেশের প্রতি ক্রমবর্ধমান চাপ তৈরি হচ্ছে, যাতে বাংলাদেশের সরকার মানবাধিকার রক্ষা, রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলোর অধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।

৬. ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা

ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন এবং সরকারের সমালোচনা নিয়ে। মিলারের এই বিষয়ে নীরবতার পক্ষ নেওয়া, সম্ভবত, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ছিল একে সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান হিসেবে না নেওয়া, বরং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এবং বৈধ রাজনৈতিক আন্দোলনকে সমর্থন করা।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবাধিকার সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি স্পষ্ট বার্তা প্রদান করছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন না করার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি, প্রেস স্বাধীনতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা সংক্রান্ত বিষয়গুলোও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মাঝে একটি সেতুবন্ধন রচনা করছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করতে পারে।

Leave a Reply