ট্রাইব্যুনাল থেকে নয় মন্ত্রীসহ ১৩ জন কারাগারে
জুলাই-আগস্টের গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৩ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন ও শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যে সাবেক নয় মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। এই ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় এবং আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, শাজাহান খান, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, সালমান এফ রহমান, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
ট্রাইব্যুনালে আসামিরা
এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এত সংখ্যক ‘ভিআইপি আসামি’ একসঙ্গে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। তাদের মধ্যে কয়েকজন আইনজীবী এবং স্বজনের উপস্থিতি ছিল অনুমোদিত, তবে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। আদালতে এই ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনানি হওয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া, আব্দুর রাজ্জাককে অন্য একটি মামলায় রিমান্ডে থাকায় আজ হাজির করা হয়নি এবং শাহজাহান খান অসুস্থ থাকায় প্রথমে আদালতে না নিয়ে আসা হলেও পরে তাকে উপস্থিত করানো হয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বিচার কার্যক্রম
ট্রাইব্যুনালের আশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত জোরদার করা হয়। র্যাব-পুলিশসহ সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল চত্বরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়, বিশেষত এই ‘ভিআইপি আসামি’দের আদালতে আনা নিয়ে।
গণহত্যা মামলার তদন্তের সময় বৃদ্ধি
এদিন, তদন্ত সংস্থা গণহত্যার মামলার তদন্ত সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন জানায়। কারণ, তদন্ত প্রতিবেদন এক মাসের মধ্যে জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে গণহত্যার অভিযোগের কিছু প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে, তবে তদন্তের কপি আসামিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ভবিষ্যত বিচার কার্যক্রম এবং সরকারের অবস্থান
এছাড়া, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়ে দেন, যে মামলার তদন্ত চলছে তা সংক্রান্ত কপি আসামিদের কাছে পৌঁছানো হবে। তিনি জানান, অতীতে ট্রাইব্যুনাল যেসব অবিচার করেছে, তার পুনরাবৃত্তি এ বার হবে না। বর্তমান সরকারের অধীনে সুবিচারের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। তার মতে, এই সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী, শুধু গণহত্যার বিচার নয়, পূর্ববর্তী সরকারের সময় ঘটে যাওয়া গুম, খুন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারও করা হবে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করা হয়েছে এবং তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে এর জন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিডিয়া প্রবেশের বিধিনিষেধ
মিডিয়ার সদস্যদের বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকরা অবশ্যই ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে পারবেন, তবে তাদের কাছে যথাযথ আইডি কার্ড থাকতে হবে। এছাড়া, মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এই বিচার কার্যক্রমের পরবর্তী পর্যায় এবং এর অগ্রগতি জনসাধারণের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দেশের ইতিহাসে একাধিক উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ট্রাইব্যুনাল এই ধরনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চাইলেও নানা কারণে তদন্ত কার্যক্রমের সময় বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।