আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি: উচ্চ ক্ষমতার অনুসন্ধান কমিটি চেয়ে রিটের শুনানি কাল
ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ২০১৭ সালের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে, যার শুনানি আগামীকাল মঙ্গলবার হতে পারে। এই রিটের মাধ্যমে চুক্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক অনুসন্ধান করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের আবেদন করা হয়েছে।
রিট আবেদনের বিষয়বস্তু
এম আবদুল কাইয়ূম নামে এক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ১২ নভেম্বর রিটটি দায়ের করেন। এতে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বরের আদানি লিমিটেডের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রিট আবেদনকারীর দাবি, ওই চুক্তি জাতীয় স্বার্থবিরোধী হতে পারে এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর জন্য একটি আন্তর্জাতিক জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গি
রিটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার শর্তগুলো অত্যন্ত অনুকূল নয় এবং এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। রিটে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্যান্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা অনেক কম খরচে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ:
- ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যুৎ কিনলে ইউনিটপ্রতি খরচ পড়ে ৫ দশমিক ৫ পয়সা।
- ভারতের অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যুৎ কেনার খরচ ৮ টাকা ৫০ পয়সা প্রতি ইউনিট।
- অথচ, আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের খরচ ১৪ টাকা প্রতি ইউনিট পড়ে, যা অনেক বেশি।
এছাড়া, নেপাল থেকেও বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে ৮ টাকার আশেপাশে ইউনিটপ্রতি খরচে, যা আদানির সঙ্গে চুক্তির তুলনায় অনেক সস্তা। রিট আবেদনকারীর দাবি, আদানি গ্রুপের সঙ্গে এই চুক্তিতে দর-কষাকষি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল না, যা প্রশ্নবিদ্ধ।
রিটের পরবর্তী কার্যক্রম
আজ সোমবার এই রিটটির শুনানি অনুষ্ঠিত হলেও, আদালত জানিয়েছেন যে বিষয়টি আগামীকালও ওঠতে পারে। আদালত রিটটির ওপর শুনানি নিয়ে, জাতীয় স্বার্থরক্ষায় একটি স্বাধীন এবং শক্তিশালী অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ব্যাপারে আদেশ দেবেন কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। রিট আবেদনের সঙ্গে সম্পূরক আবেদনও দাখিল করা হয়েছে, যাতে চুক্তির দর-কষাকষি এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি আদালতে উপস্থাপন করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আইনজীবীর বক্তব্য
রিট আবেদনকারী আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ূম বলেছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে যে দর-কষাকষি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। তিনি দাবি করেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের খরচ অত্যন্ত বেশি, যা দেশের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে। এর ভিত্তিতে, তিনি আদালতের কাছে আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং চুক্তির সঠিক প্রক্রিয়া তুলে ধরার জন্য নির্দেশনা চেয়েছেন।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের প্রভাব
গণমাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যে বিপিডিবি ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করার জন্য স্বচ্ছ দর-কষাকষি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। বিশেষত, যখন অন্যান্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ অনেক কম দামে কেনা সম্ভব, তখন আদানির কাছ থেকে এত বেশি দামে কেনার সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো, সেই বিষয়টি অনুসন্ধানযোগ্য। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত থেকে যথাযথ তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এই রিট এবং আদালতের নির্দেশনা দেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে, যা সরকারের শক্তিশালী দিকনির্দেশনা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে। রিটটি কিভাবে পরবর্তী সময়ে পরিচালিত হয় এবং আদালত কী ধরনের নির্দেশনা দেয়, তা জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।