December 23, 2024
১০০ দিনে ৮৬ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে সরকার: আসিফ

১০০ দিনে ৮৬ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে সরকার: আসিফ

নভে ১৭, ২০২৪

বিস্তারিত বিশ্লেষণ:

এখানে সরকার কর্তৃক কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ ও এর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের আওতায় ১০০ দিনে মোট ৮৬ হাজার ২৭৭ জন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৬৮ জন রাজস্ব খাতে এবং ৮৩ হাজার ৮০৯ জন প্রকল্প খাতে (আত্মকর্মী ও উদ্যোক্তা হিসেবে) নিয়োগ পেয়েছেন। এই সৃষ্ট কর্মসংস্থানগুলো দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে।

এখন, এটি বিশ্লেষণ করতে গেলে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক দেখা যায়:

১. কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি ও পরিসর:

  • ৮৬ হাজার ২৭৭ জন কর্মসংস্থান: ১০০ দিনের মধ্যে ৮৬ হাজার ২৭৭ জনের কর্মসংস্থান তৈরি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন, তবে এর প্রকৃত গুণগত মান এবং সৃষ্টির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিচার করতে হলে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন। যেমন, কতজন কর্মসংস্থানে নিয়োজিত থাকবেন এবং কতজন এই কর্মসংস্থান দীর্ঘমেয়াদী হিসেবে ধরে রাখতে পারবেন, এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।
  • রাজস্ব খাতে কর্মসংস্থান: ২ হাজার ৪৬৮ জন রাজস্ব খাতে নিয়োগ পেয়েছেন, যা সরকারী সেবা ও প্রশাসনিক খাতের মধ্যে চাকরি সৃষ্টি করার দৃষ্টান্ত। রাজস্ব খাতের চাকরি সাধারণত সরকারি সুবিধা, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রদান করে, তবে এগুলোর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
  • প্রকল্প খাতে কর্মসংস্থান: ৮৩ হাজার ৮০৯ জন প্রকল্প ভিত্তিক কর্মসংস্থান পেয়েছেন, যার মধ্যে অধিকাংশই আত্মকর্মী এবং উদ্যোক্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এটি প্রকল্পভিত্তিক শ্রম বাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, বিশেষ করে উন্নয়নমূলক কাজগুলোর সাথে সম্পর্কিত। আত্মকর্মী হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ এতে লোকাল কর্মসংস্থান বাড়ে এবং নতুন ব্যবসার জন্ম হয়।

২. প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন:

  • দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ: শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ১০০ দিনের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৫২ জন প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। এটি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান তৈরির জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ। পরবর্তীতে ৫২ হাজার ১১৫ জন বর্তমানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, যা কেবল বর্তমান কর্মসংস্থানের মান উন্নত করবে না, পাশাপাশি ভবিষ্যত শ্রমবাজারের জন্যও প্রস্তুতি তৈরি করবে।
  • বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম: যেমন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং সামাজিক সচেতনতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ৭১০ জনকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষ জনবল তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা শহরের নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক আইন মান্যকরণে সহায়ক হবে। এছাড়া, ট্রাফিক সহায়ক পুলিশ হিসেবে ২৩১ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে শক্তি যোগাবে।

৩. ভবিষ্যত লক্ষ্য:

  • ৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য: সরকারের আগামী দুই বছরে ৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দেশের বেকারত্ব কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে, এর সফল বাস্তবায়ন এবং উন্নত মানের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে প্রয়োজন হবে গুণগত প্রশিক্ষণ, সঠিক নীতিমালা এবং উপযুক্ত সরকারি সহায়তা।
  • দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যা যুবক-বেকারদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে সহায়ক হবে।

৪. সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:

  • বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান: এই পদক্ষেপগুলি সামগ্রিকভাবে দেশের বেকারত্ব কমানোর ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা এবং যুবকদের মধ্যে দক্ষতা তৈরি করা, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সরকারের কর্মসংস্থান লক্ষ্যমাত্রার সফলতা নির্ধারণ করবে।
  • উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্যোগ: আত্মকর্মী এবং উদ্যোক্তা তৈরি করার মাধ্যমে, সরকারের তরফ থেকে খোলামেলা উদ্যোগের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরের জন্যও একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে নতুন ব্যবসা এবং স্টার্টআপগুলো চলমান হবে, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

৫. সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ:

  • দক্ষতার সঠিক মান বজায় রাখা: প্রশিক্ষণের পর কর্মসংস্থান পাওয়া নিশ্চিত করা এবং প্রশিক্ষণের মান ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। প্রশিক্ষণ শুধুমাত্র চাকরির জন্য প্রস্তুতি নয়, বরং সেই চাকরির গুণগত মানও নিশ্চিত করা জরুরি।
  • চলমান কর্মসংস্থান: প্রকল্প খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পর, প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হওয়ার পর কর্মীরা কীভাবে স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থানে রাখা হবে, এটি একটি বড় প্রশ্ন। এই কর্মসংস্থানগুলো স্বল্পমেয়াদী বা অস্থায়ী হলে, তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতি ও বেকারত্ব পরিস্থিতিতে সঠিক সমাধান দিতে পারবে না

এই ১০০ দিনে সরকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও, এর কার্যকরী বাস্তবায়ন এবং পরবর্তী পর্যায়ের কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা তৈরি, বিশেষত যুবক-যুবতীদের জন্য, একটি স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও কর্মসংস্থান নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

Leave a Reply