ট্রাম্পের সামনে নতুন মধ্যপ্রাচ্য
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী সাধারণত সঠিক হয় না, তবে তাঁর সরকারী মেয়াদে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন এসেছে। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হলে, ট্রাম্পকে একটি ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, বিশেষত তার আগের মেয়াদের তুলনায়। গত এক বছরে মধ্যপ্রাচ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণকে বদলে দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতি:
১. ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ:
- ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে সরাসরি হামলা শুরুর পরে, বিশেষ করে সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলার পর, উত্তেজনা তীব্র হয়। এর পরবর্তী সময়ে ইরান প্রথমবারের মতো ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যদিও ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়ে বড় যুদ্ধের শঙ্কা এড়ায়, তবে সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
- সৌদি আরব ও ইরানের সম্পর্কের পরিবর্তন:
- ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। দু’দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তি এবং সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি বড় ঘটনা, যা পূর্বে অপ্রত্যাশিত ছিল। একে অপরের প্রতি দীর্ঘদিনের বৈরিতা থাকার পর, তারা এবার একসঙ্গে নৌ-মহড়া দিয়েছে এবং দূতাবাস খুলতে সম্মত হয়েছে। এই পরিবর্তনটি ট্রাম্পের পূর্বের নীতির সঙ্গে একেবারেই বিপরীত।
- ইসরায়েল-সৌদি আরব সম্পর্ক এবং ফিলিস্তিন:
- সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের সম্পর্ক কিছুটা ঘনিষ্ঠ হওয়ার দিকে এগোচ্ছিল, তবে গাজার পরিস্থিতি এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনের পর সৌদি আরব তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। সৌদি আরব বলেছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে কেবল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে। এর মানে, ইসরায়েলের ফিলিস্তিন নীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় এক ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্য:
- নতুন ভিন্ন পরিবেশ: ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান বিরোধী নীতি ছিল গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে তিনি সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগ দেন। কিন্তু এই বার, পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গেছে। সৌদি-ইরান সম্পর্কের পরিবর্তন, ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের গভীরতা এবং সিরিয়া, লেবানন ও গাজার সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যকে আরও জটিল করে তুলছে।
- ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ: ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ফিলিস্তিন নীতি ছিল অনেকটা একপেশে, বিশেষ করে তিনি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন এবং ইরানের বাড়তি প্রভাবের কারণে, ট্রাম্পের নতুন নীতি প্রবর্তন করা কঠিন হতে পারে। সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলি সম্পর্কের জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্ত সামনে আসছে, যা ট্রাম্পের আগের নীতির সঙ্গে একেবারেই আলাদা।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ:
- ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দ্রুত অবসান হতে পারে। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা এবং তার “আমেরিকান ফার্স্ট” নীতির কারণে, তিনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাধান দ্রুত করতে পারেন বলে জেলেনস্কি আশাবাদী। যদিও ট্রাম্পের গত মেয়াদে ইউক্রেনকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, তবে তিনি ইউরোপের নিরাপত্তার চাইতে আমেরিকার স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিতে আগ্রহী ছিলেন।
ক্যারোলিন লেভিটের নিযুক্তি:
- ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে ২৭ বছর বয়সী ক্যারোলিন লেভিটকে নিয়োগ দিয়েছেন, যা মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে স্বীকৃত হতে চলেছেন। এই নিয়োগটি ট্রাম্পের প্রশাসনে নতুন ধরনের উদ্যোগ এবং তার তরুণ নেতৃত্বের প্রতি মনোযোগের প্রতীক হতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিস্থিতি ট্রাম্পের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট মেয়াদে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তবে সৌদি-ইরান সম্পর্কের পরিবর্তন, ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার শর্ত ট্রাম্পের নীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। একইভাবে, ইউক্রেনের পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির ভারসাম্যেও নতুন দিক দেখা যেতে পারে, যেখানে ট্রাম্প হয়তো দ্রুত যুদ্ধের সমাধান করতে উদ্যোগী হবেন। তবে, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেনের পরিস্থিতি একেবারে অনিশ্চিত, এবং ট্রাম্পের সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।