এআই প্রযুক্তি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রলোভনে অনলাইনে প্রতারণা বাড়ছে
গুগল সম্প্রতি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা প্রকাশ করেছে, যা অনলাইনে প্রতারণা থেকে সুরক্ষা পেতে সহায়ক হতে পারে। গুগল জানিয়েছে, হ্যাকাররা বর্তমানে নতুন কৌশল অবলম্বন করে প্রতারণা করছে, যেখানে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে প্রতারণার শিকার করছে। এসব কৌশল তাদের প্রতারণার মাত্রাকে আরও প্রসারিত করেছে, এবং ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
গুগল জানিয়েছে যে, বর্তমানে হ্যাকাররা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ডিপফেক ভিডিও তৈরি করছে। এই ভিডিওগুলোতে তারা মিথ্যা বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়, যা একদিকে যেমন বিশ্বাসযোগ্য, তেমনি অন্যদিকে ব্যবহারকারীদের প্রতারণার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি করে।
এছাড়া, ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কিত ভুয়া প্রস্তাবনা দেয়া হচ্ছে, যেখানে ব্যবহারকারীদের মিথ্যা ক্রিপ্টো-কারেন্সি কেনার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। গুগল এই ধরণের প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে, কারণ ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক প্রতারণা বর্তমানে খুবই বাড়ছে, বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।
গুগল আরও জানিয়েছে যে, হ্যাকাররা জনপ্রিয় অ্যাপস এবং ওয়েবসাইটের নকল সংস্করণ তৈরি করে ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করছে। এই নকল প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রবেশ করে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন লগইন তথ্য, পেমেন্ট তথ্য, এবং অন্যান্য গোপনীয় তথ্য হারিয়ে ফেলছেন। সেগুলোর মাধ্যমে হ্যাকাররা মিথ্যা পণ্য বিক্রি করে বা ভুয়া সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতারণা করছে।
গুগল জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কিত প্রতারণার ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে, এবং এসব কর্মকাণ্ডে বিশেষভাবে চীনের অপরাধ চক্রগুলো সক্রিয়। এই চক্রগুলো উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দিয়ে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে।
এ ধরনের প্রতারণা থেকে ব্যবহারকারীদের রক্ষা করতে গুগল তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করেছে। কোম্পানি ইতিমধ্যে গ্লোবাল অ্যান্টিস্ক্যাম অ্যালায়েন্স এবং ডিএনএস রিসার্চ ফেডারেশনের সঙ্গে সহযোগিতায় কাজ শুরু করেছে। এছাড়া, গুগল নতুন একটি স্ক্যাম শনাক্তকরণ ফিচার চালু করেছে, যা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সন্দেহজনক কল শনাক্ত করতে সহায়ক হবে। এই ফিচারটি ফোনে ক্ষতিকর অ্যাপ ইনস্টল হলে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করবে, যাতে তারা সাইবার আক্রমণের শিকার না হন।
গুগল প্রতি ছয় মাসে একটি সতর্কবার্তা প্রকাশ করবে, যাতে ব্যবহারকারীরা তাদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেতন থাকেন। এই সতর্কবার্তাগুলোর মাধ্যমে গুগল হ্যাকারদের নতুন নতুন কৌশল সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের অবহিত করবে, যাতে তারা সচেতন হতে পারে এবং প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
গুগলের এই সতর্কবার্তা ও নতুন নিরাপত্তা ফিচারগুলো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সাইবার প্রতারণা থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে, ব্যবহারকারীদেরও নিজেদের প্রতি সচেতন থাকতে হবে, যেমন অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক না করা, অজানা অ্যাপ ইনস্টল না করা, এবং প্রলোভনে না পা দেয়া।