December 23, 2024
সূচি নেই, ভেন্যু ঠিক হয়নি—এর মধ্যেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ‘অদ্ভুত’ ট্রফি ট্যুর কেন

সূচি নেই, ভেন্যু ঠিক হয়নি—এর মধ্যেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ‘অদ্ভুত’ ট্রফি ট্যুর কেন

নভে ১৫, ২০২৪

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫-এর ভবিষ্যত নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বর্তমানে পাকিস্তানে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) ট্রফি ট্যুর ঘোষণা এবং ভারতের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব মূলত এই অস্থিরতার কারণ। এখানে কয়েকটি মূল দিক বিশ্লেষণ করা হলো:

১. টুর্নামেন্টের ভেন্যু নিয়ে অনিশ্চয়তা:

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫ পাকিস্তানে আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল, তবে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক টানাপড়েনের কারণে সেই পরিকল্পনা সংশয়ের মধ্যে পড়েছে। ভারত ক্রিকেট দলের পাকিস্তানে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো অনড়, এবং এই কারণেই টুর্নামেন্টের আয়োজক হিসেবে পাকিস্তান প্রস্তাবিত স্থান হিসেবে উঠছে না। ভারতের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের উপর টুর্নামেন্টের আয়োজক ভেন্যু নির্ভর করবে, তবে ভারতের অবস্থান কঠিন। ভারত চাইছে একটি “হাইব্রিড মডেল” যেখানে তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ দেশে (যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত) আয়োজন করা হবে।

২. পাকিস্তানের আপত্তি:

পাকিস্তান কোনোভাবেই হাইব্রিড মডেল মেনে নিতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, পুরো টুর্নামেন্ট পাকিস্তানে আয়োজন করা হবে এবং ভারতের ম্যাচও পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হবে। পাকিস্তান ক্রমাগত হুমকি দিয়ে আসছে যে, যদি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তবে তারা এই টুর্নামেন্টে অংশ নেবে না। এই অবস্থায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের প্রভাব টুর্নামেন্টের আয়োজনে অস্পষ্টতা সৃষ্টি করেছে।

৩. পিসিবির ট্রফি ট্যুরের ঘোষণা:

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ১৬ নভেম্বর থেকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫ এর ট্রফি ট্যুর শুরু হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা ইসলামাবাদে শুরু হবে এবং এরপর স্কার্দু, মুরি ও মুজাফফরাবাদে যাবে। যদিও এই ঘোষণা এক ধরনের উৎসাহ প্রদান করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে, তবে মঈন খানের মতো ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন যে, “কোন ভেন্যুতে খেলা হবে এবং পাকিস্তান ও ভারত একে অপরের বিপক্ষে খেলবে কি না”, তা যখন অনিশ্চিত, তখন এ ধরনের ট্রফি ট্যুরের আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ। মঈন খান এই সিদ্ধান্তকে “অদ্ভুত” বলে আখ্যায়িত করেছেন, কারণ কোনো নির্দিষ্ট সূচি বা ভেন্যু ছাড়া ট্রফি ট্যুর আয়োজনের সঠিক উদ্দেশ্য অস্পষ্ট।

৪. পাকিস্তান ও ভারত সম্পর্কের প্রভাব:

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপড়েন শুধুমাত্র রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জই তৈরি করেনি, বরং এর প্রতিফলন ঘটেছে ক্রিকেট মাঠে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সাফল্যের পর, এবার একই টুর্নামেন্ট পাকিস্তানে আয়োজিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভারতীয় দলের পাকিস্তানে যাত্রা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। এটি ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটের রাজনৈতিক প্রভাবের একটি বড় উদাহরণ।

৫. অন্য ভেন্যুর প্রস্তাবনা:

যেহেতু পাকিস্তান এবং ভারত দুই দেশই একে অপরের বিপক্ষে খেলার ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান নিতে পারছে না, অন্য বিকল্প ভেন্যু যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে, পিসিবির পক্ষ থেকে এটাও স্পষ্ট করা হয়েছে যে, যদি টুর্নামেন্ট পাকিস্তান থেকে সরানো হয়, তারা এতে অংশগ্রহণ করবে না। এই অবস্থায়, আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫ এর আয়োজক ভেন্যু এবং তার ভবিষ্যত নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

৬. মঈন খানের প্রশ্ন:

পাকিস্তানের সাবেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মঈন খান পিসিবির ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন। তার মতে, একটি নির্দিষ্ট ভেন্যু এবং সূচি ছাড়া ট্রফি ট্যুরের কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি উল্লেখ করেন, যখন জানা যাচ্ছে না কোথায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অনুষ্ঠিত হবে, এবং পাকিস্তান ও ভারত একে অপরের বিপক্ষে খেলবে কি না, তখন ট্রফি ট্যুরের আয়োজন অকারণ।

বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫-এর আয়োজন নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা এবং কূটনৈতিক টানাপড়েন চলমান। পাকিস্তান, ভারত, এবং আইসিসি এর মধ্যে আলোচনা চললেও, কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। পাকিস্তান যদি তাদের অবস্থান থেকে সরে না আসে, তবে এটি দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বা শ্রীলঙ্কা-এর মতো বিকল্প ভেন্যুতে হতে পারে। তবে, শেষ পর্যন্ত কোথায়, কখন এবং কারা খেলবে, তা নিশ্চিত হওয়া কঠিন, যা এই টুর্নামেন্টের ভবিষ্যত নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন সৃষ্টি করছে।

Leave a Reply