বিশাল জামাত নিয়ে জুমা আদায় করলেন সাদপন্থিরা
কাকরাইলের মারকাজ মসজিদে শুক্রবার বিশাল জামাতের মধ্যে জুমার নামাজ আদায় করেছেন তাবলীগ জামাতের মাওলানা সাদপন্থিরা। নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথেই, দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে নামাজ শুরু হয়ে সাড়ে ১২টায় তা শেষ হয়। কাকরাইল এলাকা শুক্রবার দুপুর ১২টার আগে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। হাজার হাজার মুসল্লি রাস্তা-ঘাট, এমনকি প্রধান বিচারপতির বাসভবন ছাড়িয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে জুম্মা নামাজ আদায় করেন।
নিরাপত্তার কারণে, কাকরাইল মসজিদের পাশের রাস্তা, রমনা ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাবলীগ জামাতের মাওলানা সাদপন্থি ও মাওলানা জুবায়েরপন্থিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল, বিশেষ করে সাদপন্থিরা আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন যে, তারা শুক্রবার সকালে কাকরাইল মসজিদে প্রবেশ করবেন এবং সেখানে অবস্থান করবেন। সকাল ৮টার দিকে তারা মসজিদে প্রবেশ করেন।
মসজিদ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, যার ফলস্বরূপ কাকরাইল মসজিদের এক অংশে সাদপন্থিরা ২ সপ্তাহ এবং অন্য অংশে জুবায়েরপন্থিরা ৪ সপ্তাহ করে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে মসজিদের অপর অংশটি ১২ মাসই জুবায়েরপন্থিদের দখলে থাকে। সাদপন্থিরা অভিযোগ করেছেন যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাদের প্রতিপক্ষের পক্ষেই বেশি সুবিধা মিলছে।
এই দ্বন্দ্ব শুধু কাকরাইল মসজিদেই সীমাবদ্ধ নয়, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠেও দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা যাচ্ছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে কাকরাইলে এই বিরোধ প্রকাশ্যে আসে, যেখানে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। সাদপন্থিরা অভিযোগ করেন, ইজতেমা এবং অন্যান্য বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জুবায়েরপন্থিরা অধিক সুবিধা পাচ্ছে।
এদিকে, ৪ নভেম্বর সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঘোষণা করেন যে, ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে দুই দফায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দফা শুরু হবে ৩১ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় দফা শুরু হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। তবে, মাওলানা জুবায়েরপন্থিরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে দাবি করেছেন, দেশে ইজতেমা একবারই হবে, দু’বার নয়।
৯ নভেম্বর, সাদপন্থি ইমাম মুফতি আজিমুদ্দিন একটি ভিডিও বার্তায় কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের কাকরাইল মসজিদে না আসার আহ্বান জানান। এর কিছুদিন পর, ১১ নভেম্বর, জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জুবায়েরপন্থিরা বলেন, সাদপন্থিদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
এভাবে, কাকরাইল মসজিদ এবং বিশ্ব ইজতেমার মঞ্চে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব দিনে দিনে আরও তীব্র হয়ে উঠছে।