প্যারাগুয়েতেও মেসি-জাদুর আশা
আজকের ম্যাচগুলো লাতিন ফুটবল বিশ্বে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়েছে, যেখানে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল উভয়ই তাদের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে মাঠে নামবে। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল—এই দুটি দলই দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের শক্তিশালী পরাশক্তি, আর তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সারা বিশ্বে বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে। আজকের ম্যাচগুলো শুধু পয়েন্ট অর্জনের জন্য নয়, বরং দুই দলের জন্যই বিশ্বকাপের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার বিষয়ও।
আর্জেন্টিনা বনাম প্যারাগুয়ে: মেসির মাস্টারক্লাসের প্রত্যাশা
আর্জেন্টিনা বর্তমানে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে, এবং গত মাসে তারা বলিভিয়াকে ৬-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। এতে মেসির অবদান ছিল অসাধারণ—তিনি হ্যাটট্রিক করেছেন এবং দুটি অ্যাসিস্টও করেছেন। আজ প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আবারও মেসির দিকেই প্রত্যাশা থাকবে, কারণ তিনি দলকে একাই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। আর্জেন্টিনার খেলা এখন মেসি কেন্দ্রিক, এবং তার জাদুকরী ফুটবল দেখার জন্য পুরো বিশ্ব তাকিয়ে থাকে।
তবে প্যারাগুয়ে এই ম্যাচে মেসিকে ঠেকাতে কিছুটা অদ্ভুত পদক্ষেপ নিয়েছে। প্যারাগুয়ে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা করেছে, তারা আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের এবং মেসির ১০ নম্বর জার্সি পরা যাবে না। এর কারণ সঠিকভাবে জানানো হয়নি, তবে মনে করা হচ্ছে, মেসিকে ঘিরে যেন কোনো উন্মাদনা তৈরি না হয়, সেজন্যই এই সিদ্ধান্ত। প্যারাগুয়ের উদ্দেশ্য সাফ—যতটা সম্ভব আর্জেন্টিনার কাছে ড্র পাওয়া। প্যারাগুয়ে সাধারণত আর্জেন্টিনার বিপক্ষে রক্ষণাত্মক খেলে, এবং গত সাতটি ম্যাচে তাদের মধ্যে মাত্র সাতটি গোল হয়েছে। তাদের কৌশল হলো গোল হজম না করা এবং যতটুকু সম্ভব ম্যাচটি ড্র বা অন্তত গোলশূন্য রাখার চেষ্টা করা।
এদিকে, প্যারাগুয়ে এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচে মাত্র চারটি গোল করেছে এবং সেই সঙ্গে চারটি গোলও হজম করেছে। তারা ১৩ পয়েন্ট নিয়ে ৬ নম্বরে অবস্থান করছে, এবং ২০১০ সালের পর বিশ্বকাপের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে। আজ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তাদের সাফল্য অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন হতে পারে, তবে তারা যদি রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে, তাহলে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ হতে পারে।
ব্রাজিল বনাম ভেনেজুয়েলা: চোটের মধ্যে লড়াই
ব্রাজিলের জন্য এই ম্যাচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে জয় পেলে তারা পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আরো একধাপ এগিয়ে যেতে পারে। ব্রাজিলের পারফরম্যান্স গত মাসে দুইটি ম্যাচ জিতে শক্তিশালী অবস্থানে এসেছে। তবে ভেনেজুয়েলা, যারা কখনোই বিশ্বকাপ খেলেনি, তারা এবার কিছুটা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। ১১ পয়েন্ট নিয়ে তারা বর্তমানে ৮ নম্বরে অবস্থান করছে এবং তাদের দলের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে রয়েছে।
এদিকে, ব্রাজিলের জন্য একটি বড় সমস্যা হচ্ছে চোট। গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার, ডিফেন্ডার এডার মিলিতাও এবং ফরোয়ার্ড রদ্রিগো সবাই ইনজুরিতে আক্রান্ত। এই কারণে দলের সামগ্রিক শক্তি কিছুটা কমেছে। তবে ব্রাজিল শিবিরে এক সুখবর এসেছে—ভিনিসিয়ুস জুনিয়র চোট থেকে সেরে উঠেছেন এবং রিয়ালের হয়ে শেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন, যা ব্রাজিলের জন্য ভালো লক্ষণ। এছাড়া বার্সেলোনার ফরোয়ার্ড রাফিনহাও ফর্মে আছেন, যা ব্রাজিলের আক্রমণকে শক্তিশালী করবে।
এমন পরিস্থিতিতে, ব্রাজিল যদি ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে জিততে না পারে, তবে তাদের সামনে আরো কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, কারণ পরবর্তী চারটি ম্যাচই তারা খেলবে পয়েন্ট টেবিলের সেরা পাঁচ দলের বিপক্ষে। তাই এই ম্যাচটি ব্রাজিলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে তাদের দুঃখজনক চোট সমস্যা কাটিয়ে ওঠা এবং প্রয়োজনীয় জয় নিশ্চিত করা একান্তভাবে জরুরি।
আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল দুই দলই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তাদের গৌরবময় ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এবং তাদের ম্যাচগুলো দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল চিত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে, মেসির নেতৃত্বে দলটি শক্তিশালী এবং আশাবাদী। অন্যদিকে, ব্রাজিলের জন্য চোট সমস্যা থাকলেও, তাদের ইতিহাস এবং খেলোয়াড়দের দলে ফিরে আসার খবর সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে জয় নিশ্চিত করতে তাদের তৎপরতা বাড়াতে হবে।
আজকের ম্যাচগুলো শুধু পয়েন্ট অর্জনের জন্য নয়, বরং আগামী বিশ্বকাপের জন্য সম্ভাবনা বাড়ানোর, শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং প্রিয় খেলোয়াড়দের চমকপ্রদ পারফরম্যান্স দেখানোর একটি সুযোগও।