December 22, 2024
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও ঋণ শোধে ৩০০০ কোটি টাকা পাচ্ছে আইসিবি

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও ঋণ শোধে ৩০০০ কোটি টাকা পাচ্ছে আইসিবি

নভে ১৩, ২০২৪

বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), সম্প্রতি সরকারের কাছ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণের নিশ্চয়তা পেয়েছে। এই ঋণ সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ নিশ্চিত করেছে, যা আইসিবিকে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা আনয়ন এবং তাদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করা হবে। এই সিদ্ধান্তের কয়েকটি দিক বিশ্লেষণ করা যেতে পারে:

১. আইসিবির আর্থিক সক্ষমতা ও শেয়ারবাজারের জন্য প্রভাব

আইসিবির ঋণ নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো তাদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো, যা বিশেষত শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আইসিবি শেয়ারবাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে, এবং বাজারে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজার যে অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে, সেখানে আইসিবির এই ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্তটি শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকারের সহায়তা পেলে, আইসিবি শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে, বিশেষ করে শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন ও চাপে থাকা বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

২. ঋণের সুদের হার এবং শর্তাবলী

সরকারের দেওয়া এই ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, তবে এটি বাণিজ্যিক ঋণের চেয়ে কম হবে। এটি আইসিবির জন্য সুবিধাজনক, কারণ শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি উন্নতির জন্য বড় অঙ্কের ঋণ সংগ্রহ করা, সুদ কম হলে তা দীর্ঘমেয়াদীভাবে manageable হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া ঋণের শর্তাবলী অনুযায়ী, যদি আইসিবি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তবে সরকার তা পরিশোধ করবে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুনাফা থেকে এই ঋণের সুদ বা মূলধন পরিশোধ করা যাবে না—এটি সরকারের ঋণের অঙ্গীকারকে আরও দৃঢ় করে।

৩. শেয়ারবাজারের প্রতিক্রিয়া

অর্থমন্ত্রী এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, সরকারের এই পদক্ষেপ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে। মিনহাজ মান্নান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক, উল্লেখ করেছেন যে বর্তমান সরকার শেয়ারবাজারের প্রতি আন্তরিক এবং এটি তার পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রমাণ করছে। শেয়ারবাজারের জন্য ঋণ নিশ্চয়তা, কর হার কমানো, এবং নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অধীনে মানদণ্ড বৃদ্ধি—এসব পদক্ষেপ একত্রে শেয়ারবাজারে পুনরুজ্জীবন ঘটানোর আশাবাদ সৃষ্টি করছে।

৪. বাজার পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত পূর্বাভাস

বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর প্রধান সূচক, ডিএসইএক্স, ইতিবাচক প্রবণতায় রয়েছে, এবং আজকের বাজারের চিত্র তেমনই প্রতিফলিত হয়েছে—সূচক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫,৩১৬ পয়েন্টে পৌঁছেছে। যদিও লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের চেয়ে কমেছে (৪৮০ কোটি টাকার বিপরীতে ৯৮ কোটি টাকা কম), তবুও সূচকের বৃদ্ধির বিষয়টি একটি ইতিবাচক সংকেত। বিশেষ করে, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বীকন ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক, বিএসআরএম লিমিটেড এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) এর শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি বাজারের উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে।

এটি লক্ষ্যণীয় যে শেয়ারবাজারের পরবর্তী প্রবণতা সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উপর নির্ভর করবে। বিশেষত, যদি আইসিবি তার ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনাটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে তা শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হবে।

এখন পর্যন্ত সরকারের আইসিবি’র ঋণ নিশ্চয়তা এবং শেয়ারবাজারের জন্য পদক্ষেপগুলো দেশের শেয়ারবাজারের উন্নতির সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। তবে, সরকারের অন্যান্য পদক্ষেপগুলির পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, বাজারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। সরকারি পদক্ষেপগুলির কার্যকারিতা ও বাস্তবায়ন শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা আনার দিকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে—এটি আশাবাদীভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

Leave a Reply