December 23, 2024
‘আমি কোনো পদ চাই নাই’ বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন ফারুকী

‘আমি কোনো পদ চাই নাই’ বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন ফারুকী

নভে ১৩, ২০২৪

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া ও অভিযোগের জবাব

বাংলাদেশের জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সম্প্রতি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এই পদ নেওয়ার পর তাকে নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে ফারুকী নিজের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন, যা নিয়ে বেশ আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। তার স্ট্যাটাসে তিনি নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন।

পদ না চেয়েও দায়িত্ব গ্রহণ

ফারুকী তার স্ট্যাটাসে শুরুতে বলেন, তিনি কখনোই মন্ত্রণালয়ের কোনো পদ চাননি, তবে দায়িত্ব গ্রহণের পর নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন। তার কথায়, তিনি সহকর্মীদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি করেছেন যে, সংস্কৃতিতে কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে হবে, যা স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে সংস্কৃতি কর্মীদের কাজে আসবে।

ফ্যাসিস্টের দোসর হওয়ার অভিযোগ

ফারুকী মূলত দুটি অভিযোগের প্রতিবাদ করেছেন, যার মধ্যে একটি ছিল তাকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ হিসেবে আখ্যায়িত করা। তিনি উল্লেখ করেছেন, যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করেছেন, সেই ফ্যাসিস্টের সহযোগী হওয়ার অভিযোগ তার প্রতি উঠেছে। ফারুকী তার স্ট্যাটাসে দাবি করেন, তিনি ১৬ জুলাই থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে একে উত্থাপন করেছিলেন, জানতেন যে এর ফলস্বরূপ তার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু অথবা জেল। এমনকি তিনি একাধিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, যা ছিল রাষ্ট্র মেরামতের উদ্দেশ্যে।

বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক

ফারুকী তার লেখায় বিএনপির নেতাদের ফোনকলের কথা উল্লেখ করেন, বিশেষ করে ২০১৪ সালে শিমুল বিশ্বাস ফোন করেছিলেন তার লেখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে। তিনি বলেন, তার লেখার মধ্যে বিএনপির নেতাদের কিছু পছন্দ ছিল, যদিও তিনি কোনো দল করেন না। তার বক্তব্য, আওয়ামী লীগে থাকার কারণে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা তাকে ফোন করে কীভাবে তার লেখার প্রতি সম্মান দেখাচ্ছিলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।

ভারতীয় হেজেমনির অংশ হওয়ার অভিযোগ

আরেকটি অভিযোগ ছিল তাকে ভারতীয় হেজেমনির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফারুকী তার স্ট্যাটাসে জানান, তিনি কখনোই কোন দেশের হেজেমনির পক্ষে কথা বলেননি এবং তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন আপস করেন না। তিনি ফেলানীর মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে লিখেছিলেন এবং ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মকর্তার কাছ থেকে একসময়ে তার বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ শুনেছিলেন। তার মতে, ভারতীয় হেজেমনির অংশ হয়ে যাওয়া বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন।

ফ্যাসিবাদী সরকার ও ব্যক্তিগত ইতিহাস

ফারুকী আরো জানান, ২০১২ সালে তিনি এবং তার সহযোদ্ধারা গোপনে আলোচনা করতেন কীভাবে “এই জালিম সরকারকে হটানো যায়”। তার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি কোনো বিপ্লবী না হলেও, তিনি ফিল্মমেকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন এবং নিজের সেই পরিচয়ে গর্বিত। তবে মন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি মনে করেন, এটি কোনো অর্জন নয় বরং শুধুমাত্র একটি পাবলিক সার্ভেন্টের দায়িত্ব।

মন্ত্রীত্ব গ্রহণে তার অবস্থান

শেষে, ফারুকী বলেন, তিনি মন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি কোনো বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন না। এটি তার জন্য একটি দায়িত্ব, যা তিনি বিশ্বাস করে গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি জীবনের এই পর্যায়ে এসে দেশের জন্য কিছু দিতে চান এবং আল্লাহর রহমতে তাকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে, তিনি আফসোস করেছেন যে তাকে এই বিষয়গুলো নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখতে হচ্ছে।

ফারুকীর এই স্ট্যাটাস একটি প্রতিক্রিয়া, যা তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলোর প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছে। তিনি তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ নন, বরং একজন স্বাধীন চিন্তাবিদ এবং ফিল্মমেকার হিসেবে কাজ করতে চান। মন্ত্রণালয়ে যোগদান তার জন্য নতুন একটি অভিজ্ঞতা, যা তিনি দেশ ও সংস্কৃতির উন্নতির জন্য কাজে লাগাতে চান।

Leave a Reply