ট্রাম্প প্রথম দফায় সব অভিবাসীকে কেন যুক্তরাষ্ট্রছাড়া করতে পারেননি
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনিবন্ধিত অভিবাসীদের জন্য ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যে আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা বর্তমানে আরও তীব্র হয়েছে। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার পর তাঁর পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে অভিবাসীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত, তিনি পূর্বে ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশে বসবাসরত লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বের করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে, তাঁর প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন অনেক পরিকল্পনা, যেমন দক্ষিণ সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ এবং মুসলিম দেশগুলির ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি ছিল অত্যন্ত কঠোর। তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিবাসী তল্লাশি চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন, এবং অভিবাসীদের ধরতে গিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যেখানে আটক শিবিরগুলোতে নির্দোষ লোকজনও আটকা পড়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের ব্যাপকভাবে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছিল, এবং এর ফলে প্রায় ১৫ লাখের বেশি অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল। তবে, এর তুলনায় ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর প্রথম মেয়াদেই প্রায় ২৯ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠান।
বাইডেন প্রশাসন এবং বর্তমান পরিস্থিতি
অবাক করার বিষয় হল যে, বাইডেন প্রশাসনও অভিবাসীবিরোধী নীতি অব্যাহত রেখেছে এবং এর ফলে বহু অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যদিও বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি, তবুও ১৪ লাখ ৯০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাইডেনের শাসনামলে মূলত সীমান্ত এলাকায় উপস্থিত অভিবাসীদের ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ট্রাম্পের মতো দেশভিতরে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রেও একইরকম কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নীতির ভবিষ্যত
এখন, বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাঁর অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হতে পারে। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টম হোম্যান বিশ্বাস করেন, আগামী জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তাঁর মতে, “বাইডেন প্রশাসনের অধীনে এখন এক কোটি অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, এবং ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন।”
জটিলতা এবং প্রক্রিয়ার বাধা
এমনকি, অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ নয়। অনেক দেশে তাদের নাগরিকদের ফেরত নেওয়া নিয়ে একে অপরকে সমঝোতায় আসতে হয়। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো চুক্তি অনুযায়ী তারা অন্য দেশের অভিবাসীদেরও গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে, কিন্তু অন্যান্য দেশ এই নীতি মেনে নিতে দ্বিধান্বিত। অভিবাসী ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহায়তা না পাওয়ার কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যা অভিবাসন নীতির কার্যকারিতায় আরও সমস্যা সৃষ্টি করছে।
ট্রাম্পের পরিণতি: পরিবার বিচ্ছিন্নতা ও শিবিরে আবদ্ধতা
ট্রাম্পের কঠোর নীতির ফলে অনেক অপরাধের রেকর্ড নেই এমন ব্যক্তিরাও আটক শিবিরে আটকা পড়েছিলেন, যার ফলে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, অপরাধী ব্যক্তিদের পরিবর্তে সাধারণ অভিবাসীদের ধরতে গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন শিবিরগুলোর ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে ফেলেছিল, যা প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করে তুলেছে।
এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি ফের কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনিবন্ধিত অভিবাসীরা এক নতুন আতঙ্কের মুখোমুখি হবে।