শরীর আর সায় দিচ্ছে না
মুশফিকুর রহিমের চোট সমস্যা: বয়স, ফিটনেস ও দায়িত্বের চাপ
৩৮ বছরে পা রেখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান এবং উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিম। বয়সের ভার, চোটের সমস্যার পাশাপাশি ক্রিকেট মাঠে তাঁর পারফরম্যান্সে যে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়ছে, তা আর অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তারপরও মুশফিক নিজের মনোভাব এবং পরিশ্রমের দিক থেকে এখনও অনেক তরুণের চেয়ে এগিয়ে। তাঁর মতে, বয়স শুধুমাত্র একটি সংখ্যা, এবং ফিটনেস ও ফর্মের ভিত্তিতে খেলোয়াড়ের সক্ষমতা নির্ধারণ হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শরীরের সীমাবদ্ধতা শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে, আর সেটাই বারবার চোটের মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে।
চোটের সমস্যা: ৮ মাসে তিনবার
মুশফিকের জন্য গত কিছু মাস ছিল চ্যালেঞ্জিং। ২০২৪ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাসকিন আহমেদের করা বলের কারণে তাঁর ডানহাতের বুড়ো আঙুলে চোট লাগে। ওই সময়ও তাঁকে পুরো ম্যাচ উইকেটকিপিং করতে হয়েছে, তবে পরবর্তীতে এক্স-রে রিপোর্টে জানা যায়, আঙুলে চিড় ধরেছে। এরপর থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য তাঁকে বিশ্রাম নিতে হয়েছিল। এরপর পাকিস্তান সফরে ফিরে তিনি দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেও কাঁধের চোটের কারণে তাঁকে ব্যাটিংয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই চোটের সমস্যা তাঁর পিঠেও ছড়িয়ে পড়ে, যার কারণে পরবর্তী কয়েকটি টেস্ট ম্যাচে তাঁর পারফরম্যান্স কমে যায়।
আফগানিস্তান সিরিজে নতুন চোট
এখন আবার, আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে আবার চোট পেয়েছেন মুশফিক। উইকেটকিপিংয়ের সময় বাঁহাতের তর্জনীতে চোট লাগে, এবং এক্স-রেতে ধরা পড়ে আঙুলের ওপরের অংশে চিড়। এই চোটের কারণে তিনি সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে খেলতে পারবেন না। চোটের কারণে তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও কিছুটা কমে গেছে, বিশেষত ব্যাটিংয়ে তাঁর সময়ও তেমন ভালো যাচ্ছে না। শেষ ১২ ইনিংসে মাত্র একটি ফিফটি করেছেন মুশফিক, যা তাঁর মান অনুযায়ী অনেক কম।
টিম ম্যানেজমেন্টের দায়
মুশফিকের চোটের সমস্যায় শুধু তাঁর শরীরই দায়ী নয়, দলের টিম ম্যানেজমেন্টেরও কিছু দায় রয়েছে। ৩৫ বছর বয়সের পর একজন খেলোয়াড়ের উপর শারীরিক চাপ বেশি পড়ে, বিশেষত যখন তাঁকে উইকেটকিপিংয়ের মতো কঠিন দায়িত্বে রাখা হয়। মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের শরীর তো আর আগের মতো প্রস্তুত থাকবে না। স্কোয়াডে বেশ কিছু তরুণ কিপার থাকার পরও কেন তাঁকে এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর আগে, দু’বার কিপিং করতে গিয়ে চোটে পড়েছেন মুশফিক, যা তাঁর শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপেরই প্রতিফলন।
মুশফিকের মনোভাব ও ভবিষ্যত
তবে মুশফিকের মনোভাব একেবারেই আলাদা। তিনি মনে করেন, বয়স কোনো বিষয় নয়, ফিটনেস আর ফর্মই আসল। তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে অভিজ্ঞতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি নিজের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। এখনও মাঠে তাঁর পরিশ্রম এবং নিবেদন অনেক তরুণের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। তবুও, শরীর তো আর চিরকাল সহায়তা দিতে পারে না, আর সেটাই বারবার মুশফিককে মনে করিয়ে দেয়। তিনি নিজেও জানেন, হয়তো আর কিছুদিন পরই এ ধরনের চোটের কারণে তাঁকে ক্রিকেট থেকে সরে যেতে হবে।
মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু তার বয়স, ফিটনেস এবং চোটের কারণে সামনে হয়তো কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি দলীয় প্রয়োজনীয়তা মেটাতে এবং নিজের ক্যারিয়ার রক্ষা করতে হয়, তবে হয়তো তাঁকে টি২০ ছাড়ার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। তবে তাঁর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে শরীরের সুরক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের সেরাটা দিতে পারা।