কেমন গেল অন্তর্বর্তী সরকারের ৩ মাস
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস: কী কী কাজ হয়েছে এবং চ্যালেঞ্জসমূহ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর, ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। আজ, ৮ নভেম্বর, এই অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্ণ হলো। এই তিন মাসে সরকারের কার্যক্রম ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
সরকারের কর্মসূচি ও পদক্ষেপ
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অর্থনীতি সচল রাখার পাশাপাশি, দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার কার্যক্রমের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা, এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
১. রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ও নির্বাচন:
অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করেছে, এবং তাদের কাছ থেকে নির্বাচন ও সংস্কারের জন্য একটি রোডম্যাপের দাবি এসেছে। তবে, সরকার এখনো কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি।
২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার:
গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রী-এমপিরা, এবং তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
৩. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ:
দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে, এই দুটি বিষয় নিয়ে এখনও তীব্র চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
৪. সংস্কার কমিশন গঠন:
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এতে সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, পুলিশ সংস্কার, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৫. মেট্রোরেল স্টেশন চালু:
মেট্রোরেলের মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন চালু করা হয়েছে, যা রাজধানীর যানবাহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
৬. ৮টি জাতীয় দিবস বাতিল:
আওয়ামী লীগের দলীয় দিবসগুলোকে জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগে আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ, ৫ আগস্ট, ৮ আগস্ট, ১৫ আগস্ট, ১৮ অক্টোবর, ৪ নভেম্বর, এবং ১২ ডিসেম্বর অন্তর্ভুক্ত।
চ্যালেঞ্জসমূহ
প্রথম দিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার বিভিন্ন মহল থেকে একাধিক দাবি পেয়ে চাপে পড়েছিল। চাকরি জাতীয়করণ, গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, এবং মব জাস্টিসের মতো ঘটনা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
১. দ্রব্যমূল্য ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা:
বিভিন্ন বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক দলের নেতারা সরকারের কাছে দুইটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দ্রব্যমূল্য এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
২. নির্বাচন ও সংস্কার:
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হলেও, এখনও নির্বাচনের জন্য কোন রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি, যা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
৩. রাষ্ট্রীয় সংস্কার:
বিগত সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও, এটি বাস্তবায়ন করার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
সরকারের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
অন্তর্বর্তী সরকার যদিও শুরুতে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল, তারপরও রাজনৈতিক শান্তি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, সরকারের সামনে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, বিশেষত নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে: নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, এবং জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সরকারের সাফল্য নির্ভর করবে, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার ওপর এবং জনগণের আস্থা অর্জন করার ওপর।
এছাড়া, দেশের বৈদেশিক নীতি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের আরো বড় লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।