পরীমণি, রঙিলা কিতাব ও অন্যান্য
জীবনের নতুন অধ্যায়ে পরীমণি: মা হওয়ার পর পর্দায় সুপ্তি চরিত্রে রঙিলা কিতাব
জীবন এক অদ্ভুত ছকের মধ্যে চলে, এবং এই ছকের বৃত্ত একেক মানুষের কাছে একেক রকম। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ক্ষমতা, রাজনীতি, এবং সাদামাটা জীবন—সবকিছু মিলিয়ে একটি বর্ণময় ক্যানভাস তৈরি হয়। চিত্রনায়িকা পরীমণির জীবন যেন আরও বর্ণময়, আরও রহস্যময়, আর থ্রিলার ও সাসপেন্সে ভরপুর। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে পরীমণির জীবনের নতুন অধ্যায় এখন মা হওয়ার অভিজ্ঞতা। দুই সন্তান নিয়ে এখন পরীমণির পৃথিবী ঘূর্ণায়মান, যেখানে অভিনয়, উদযাপন এবং অন্যান্য অনেক কিছুই রয়েছে।
মা হওয়ার পর নায়িকাদের মধ্যে একটি সাধারণ প্রশ্ন ওঠে—তারা কি কাজে ফিরতে পারবেন? পরীমণির বেলায়ও এমন প্রশ্নের উত্তরের জন্য ভক্তরা অপেক্ষা করছিলেন। তবে, পরীমণি নিজেই কাজে ফিরেছেন এবং করেছেন ওটিটি সিরিজ ‘রঙিলা কিতাব’, যার ট্যাগলাইন হচ্ছে “রক্তে রাঙানো প্রেমের কিসসা”। এই সিরিজটি পরীমণির বাস্তব জীবনের মা হওয়ার অভিজ্ঞতাকেও প্রতিফলিত করেছে, যা চরিত্র সুপ্তির মধ্যে দেখা গেছে।
‘রঙিলা কিতাব’ সিরিজের কাহিনী
নব্বইয়ের দশকের প্রেক্ষাপটে ‘রঙিলা কিতাব’ সিরিজের গল্প আবর্তিত হয়েছে। এটি কিংকর আহসানের রচিত উপন্যাসের ভিত্তিতে তৈরি, এবং এর ট্রেলারও অনেক কিছু বলে দেয়। বরিশালের শহরে প্রদীপ ও সুপ্তির সুখী সংসারের গল্প দিয়ে শুরু হয়। তবে, মিথ্যা অভিযোগে তাদের জীবনে এক বিভ্রান্তি চলে আসে। প্রদীপের অতীত তাদের শান্ত জীবনকে তাড়া করতে থাকে। গর্ভবতী সুপ্তিও তার স্বামীর সঙ্গে পালাতে শুরু করেন। এই গল্পের মূল চরিত্র সুপ্তি, যাকে পরীমণি অভিনয় করেছেন। পরীমণির বিপরীতে অভিনয় করেছেন মোস্তাফিজুর নুর ইমরান, যিনি প্রদীপ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
সিরিজটির চিত্রনাট্য যৌথভাবে লিখেছেন অনম বিশ্বাস ও আশরাফুল আলম শাওন। ২০২১ সালে, বিশিষ্ট চিত্রনির্মাতা অনম বিশ্বাস উপন্যাসটির চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেন এবং পরে এটি ওয়েব সিরিজে রূপান্তরিত হয়, যা হইচই প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায়।
পরীমণির চরিত্র নির্বাচন কেন?
পরিচালক অনম বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘রঙিলা কিতাব’ সিরিজের জন্য সুপ্তি চরিত্রে এমন একজন অভিনেত্রী দরকার ছিল, যিনি মাতৃত্বের অনুভূতি উপলব্ধি করেছেন। পরীমণি ছিলেন তাদের প্রথম পছন্দ, কারণ তিনি বাস্তব জীবনেও মা হয়েছেন এবং এই চরিত্রের প্রতি তার অনুভূতি ছিল অনেক গভীর। অনম বিশ্বাস বলেন, “পরীমণি একজন খুবই ট্যালেন্টেড অভিনেত্রী। তিনি মানসিকভাবে চরিত্রটিতে পূর্ণরূপে ডুবে গিয়েছিলেন, এবং চরিত্রটির জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।”
মা হওয়ার পর পরী কীভাবে চরিত্রে রূপান্তরিত হলেন?
সিরিজটির গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সুপ্তি চরিত্রটি ছিল এক গ্যাংস্টারের স্ত্রী, যিনি গর্ভবতী এবং মিথ্যা অভিযোগে তার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। সিরিজের শুটিংয়ের সময় পরীমণি এই চরিত্রে পুরোপুরি নিজেদের ঢেলে দেন। পরীমণি নিজে বলছেন, “মা হওয়ার পর ‘রঙিলা কিতাব’ আমার কাছে এসেছিল, আর আমি এই কাজটি দারুণভাবে গ্রহণ করেছি। শুটিংয়ের সময় মনে হয়েছে, আমি যেন বাস্তবের চরিত্র করছি।”
পরীমণির মতে, নায়িকাদের প্রেগন্যান্সি বা বেবি বাম্প দেখানো উচিত নয়, তবে রঙিলা কিতাবের মাধ্যমে তিনি এই চরিত্রটি করতে পেরে সন্তুষ্ট। সিরিজে তার চরিত্রের অনুভূতি যেন বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিলে যায়, এবং এটি তার অভিনয়কে আরও প্রাণবন্ত ও বাস্তবসম্মত করে তোলে।
সিরিজের মুক্তি এবং পরীমণির অবদান
‘রঙিলা কিতাব’ সিরিজটি ৮ নভেম্বর হইচইতে প্রকাশিত হয়, এবং পোস্টারে পরীমণির প্রেগন্যান্সির ছবি চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তার অভিনয় ও চরিত্রের গভীরতা দর্শকদের কাছে একটি নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে।
একদিকে তার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে তার অভিনয় দক্ষতা—সব কিছু মিলিয়ে পরীমণি এই সিরিজে দর্শকদের সামনে এক নতুন চিত্র তুলে ধরেছেন। ‘রঙিলা কিতাব’ শুধু একটি ওটিটি সিরিজ নয়, এটি পরীমণির জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের প্রতিফলনও বটে, যেখানে একজন মা, একজন অভিনেত্রী এবং একজন শক্তিশালী চরিত্রের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে।