পাঠচক্র থেকে গণ-অভ্যুত্থানে
রাজনৈতিক জগতে আগমন ও পথচলা: নাহিদ ইসলামের অভিজ্ঞতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ও প্রথম আন্দোলন:
নাহিদ ইসলাম কখনো ভাবেননি যে, সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই সামাজিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর ইচ্ছা তাঁকে রাজনীতির দিকে টেনে আনে। ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের সময় সহপাঠীর গ্রেপ্তার তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
ডাকসু নির্বাচন ও রাজনৈতিক অবস্থান:
২০১৯ সালে নুরুল হকের প্যানেল থেকে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রথাগত ধারার রাজনীতি তাঁকে তেমন আকর্ষণ করেনি। পরবর্তীতে ক্যাম্পাসের যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছেন এবং আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন।
নতুন সংগঠনের দিকে যাত্রা:
২০২৩ সালে “গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি” নামে একটি নতুন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন নাহিদ ও তাঁর সহযোদ্ধারা। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা দেখা দেয়। এই বাস্তবতায় সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে থাকেন নাহিদ, যা পরবর্তীতে একটি সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে রূপ নেয়।
কোটা পুনর্বহাল বিরোধী আন্দোলন:
২০২২ সালে আবরার ফাহাদ স্মরণসভায় হামলার পর নাহিদ ইসলাম “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” নামক একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন। এই আন্দোলন কেবল চাকরির কোটা ব্যবস্থা নয়, বরং সমাজের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। আন্দোলনের একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক কৌশলের পরিবর্তে ভিন্নধর্মী কর্মসূচি চালানো।
কৌশলগত অবস্থান ও নেতৃত্বের ধরন:
নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে আন্দোলন একক নেতৃত্ব বা প্রচলিত কাঠামোতে পরিচালিত হয়নি। বরং পরিচিত মুখগুলোকে আড়ালে রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া সরকারবিরোধী সকল মতাদর্শের মানুষের জন্য একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক পরিসর তৈরি করার চেষ্টা করা হয়।
গোয়েন্দা সংস্থার চাপে পালানোর জীবন:
আন্দোলনের সময় গোয়েন্দা সংস্থার চোখ এড়াতে নাহিদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ছদ্মবেশে মাঠে কাজ চালিয়ে যান। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আন্দোলনের পরিকল্পনা প্রকাশ না করায় গোয়েন্দারা বারবার বিভ্রান্ত হয়।
গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের অভিজ্ঞতা:
আন্দোলন চলাকালে নাহিদ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়। এক পর্যায়ে তাঁকে আন্দোলন বন্ধ করার শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়, কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্ব থামিয়ে না রেখে তিনি সংগ্রাম চালিয়ে যান।
আন্দোলনের চূড়ান্ত সাফল্য ও শেখ হাসিনার বিদায়:
এক পর্যায়ে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেন নাহিদ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের মধ্য দিয়ে তাঁদের আন্দোলনের একটি চূড়ান্ত সফলতা আসে।
উপসংহার:
নাহিদ ইসলাম সবসময় পেছনে থেকে কাজ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতি তাঁকে নেতৃত্বে নিয়ে আসে।