‘মুক্ত বাতাসেও’ স্বস্তি মিলছে না নেতাকর্মীর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার ও মামলায় সাজা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রায় দুই হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন ঢাকার বিভিন্ন আদালত, যার মধ্যে মৃত এবং গুমের শিকার ব্যক্তিরাও আছেন। উদাহরণস্বরূপ, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের বিরুদ্ধে চারটি গায়েবি মামলায় সাড়ে ১২ বছরের সাজা হয়। বিগত ১৭ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে ২১২টি রাজনৈতিক মামলা করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হলেও এই মামলাগুলো নিয়ে এখনও তাঁকে নিয়মিত আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য মাসুদ রানার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩৭টি মামলা। তিনি ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন, তবে অভ্যুত্থানের পরও মামলার জটিলতার কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না। তিন বছর বয়সী ছেলে ফাইয়াজ মাসুদকে ছেড়ে মাসুদ রানাকে বিদেশে যেতে হয়েছিল। একইভাবে, বরিশাল স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম জনির জীবনও তছনছ হয়ে গেছে রাজনৈতিক মামলার কারণে। আন্দোলনের সময় তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলেন এবং আদালতের সাজার রায় শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, ওয়ান-ইলেভেন থেকে বিরোধীদলের ওপর মামলার খড়্গ নেমে আসে। ২০০৯ সালের পর থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার মামলা হয়, যাতে আসামি করা হয়েছে প্রায় ৫৯ লাখ মানুষকে। শুধু গত বছরেই তিন মাসের মধ্যে ১ হাজার ৬৪৫টি মামলায় প্রায় ৭০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছিল এবং ২৫ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না হলে কোনো নিরপেক্ষ অবস্থার সৃষ্টি হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অবিলম্বে রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহার এবং নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলার বর্তমান অবস্থা নিরূপণে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। এই সেল দেশব্যাপী তথ্য সংগ্রহ করছে এবং মামলার তালিকা প্রস্তুত করছে। এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকার জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দুটি কমিটি গঠন করেছে, যারা মামলার পর্যালোচনা করবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করবে।