সংস্কার প্রস্তাবের আগেই ইসি গঠনের প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার গঠিত কমিশন একটি প্রস্তাব তৈরির কাজ করছে। তবে এর আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য সরকার অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে, যা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন। তারা মনে করেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের প্রথম ধাপ হওয়া উচিত ইসি গঠনের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। পুরোনো আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান কমিটি করা হলে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। সরকারের উচিত ছিল সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করা।
২০০৭ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ১০টি কমিশন গঠন করেছিল। এর মধ্যে একটি ছিল নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, যা গত এক মাস ধরে বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। কমিশনটি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে সরকার ২০২২ সালে পাস হওয়া ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’ অনুযায়ী নতুন ইসি গঠনের জন্য অনুসন্ধান কমিটি করেছে। তবে এ আইনের মাধ্যমে অতীতে ইসি গঠন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, কারণ এ আইনে সরকারের পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও আইনটি নিয়ে সমালোচনা করেছে এবং তাদের দেওয়া অনেক সংশোধনী প্রস্তাব উপেক্ষা করা হয়েছিল।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের একটি সূত্র জানায়, ইসি গঠনে অনুসন্ধান কমিটি করা হলেও এ বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে কোনো মতবিনিময় হয়নি। কমিশনটি ইতিমধ্যে ইসি নিয়োগ আইনের একটি নতুন খসড়া তৈরি করেছে, যা সরকারের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ফলে কমিশনের এই কাজটি অর্থহীন হয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার জানান, যাঁদের নিয়ে অনুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে, তাঁরা সবাই সম্মানিত ব্যক্তি। সঠিক ব্যক্তিরা দায়িত্ব পেলে দুর্বল আইন দিয়েও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঘোষণায় অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী এবং সদস্য হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক মো. নূরুল ইসলাম, পিএসসি চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম, অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার ও অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগমকে মনোনীত করা হয়েছে।
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন মনে করেন, সরকারের ওপর নির্বাচনের চাপ থাকায় হয়তো আগের আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে। তবে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করা হলে পরিস্থিতি আরো ভালো হতো।