December 23, 2024
ঋণ নিয়ে সোয়া ২ লাখ কোটি টাকার রাজনৈতিক প্রকল্প

ঋণ নিয়ে সোয়া ২ লাখ কোটি টাকার রাজনৈতিক প্রকল্প

অক্টো ২৮, ২০২৪
পূর্ববর্তী সরকার শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর একটি টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৪,০০০ কোটি টাকা এবং কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। কাজটি শেষ হওয়ার কথা ২০২৭ সালে। তবে প্রকল্পটির কাজ কেবল সমীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, যার জন্য ব্যয় করা হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা। একইভাবে ঢাকা মহানগরীর ইনার রিং রোডের ওপর একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছিল, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫,১২০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটিও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর থেমে আছে।

এ ধরনের আরও ১২টি ঋণনির্ভর প্রকল্প নিয়েছিল পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার। সব মিলিয়ে প্রকল্পগুলোর জন্য নির্ধারিত ব্যয় ছিল ২,২৪,৩৭৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সক্ষমতার আলোকে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এগুলো মূলত রাজনৈতিক স্বার্থে জনগণকে খুশি করার জন্য গ্রহণ করা হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন অযোগ্য প্রকল্পগুলোর সমীক্ষায় ৪৩১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, ১২টি প্রকল্পই বৈদেশিক ঋণ, জি-টু-জি, অথবা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬টি প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়, যেগুলোর জন্য বরাদ্দ ব্যয় ছিল ১,৩০,৬৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাকি ৬টি মাঝারি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ব্যয় ছিল ৯৩,৭১৫ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতে, এই প্রকল্পগুলোতে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা থাকে, যা মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব মতামতের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। প্রকল্প পরিচালকদের দফায় দফায় সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। ফলে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উন্নয়নের মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চলমান পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভিত্তি হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন ব্যবহার করা হবে। সভায় দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করে প্রকল্পের মানসম্পন্ন বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নতুন মেগা প্রকল্প নেওয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় নেওয়া ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখনও চলমান রয়েছে। চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার মেঘনা-ধনাগদা নদীর ওপর সংযোগ সেতু এবং ভুলতা-আড়াইহাজার-নবীনগর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। তবে এখনও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হকের মতে, পূর্ববর্তী সরকারের কিছু আমলা টেকনিক্যাল জ্ঞানের অভাব থাকা সত্ত্বেও বড় প্রকল্পগুলো গ্রহণ করার সাহস দেখাতেন। ফলে অনেক প্রকল্প ফরমায়েশি ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে আমলাদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার গুরুত্ব দিতে হবে।

এই প্রকল্পগুলো নিয়ে বর্তমানে সরকারের নতুন নীতিমালা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা দৃঢ়ভাবে অনুভূত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে।

Leave a Reply