আদালতে প্রতি নিয়োগে ১০-২০ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন আনিসুল হক
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সিটিজেন ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অর্থপাচারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা তদন্তে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। দুদকের উপপরিচালক আখতারুল ইসলাম আজ এক সাক্ষাৎকারে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন যে, এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আনিসুল হকের দুর্নীতির অভিযোগ
আনিসুল হক তার আইনমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগপ্রার্থী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়া হত। এই দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি বড় অংকের অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। কসবা, ত্রিশাল এবং পূর্বাচলে তিনি নিজ নামে ৬ দশমিক ৮০ একর জমি ক্রয় করেছেন, যা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্জিত বলে অভিযোগ উঠেছে।
আনিসুল হকের আরও আর্থিক সম্পদের খোঁজ মেলে, যার মধ্যে রয়েছে সিটিজেন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকে তার ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার এবং বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ২৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার আমানত ও সঞ্চয়পত্র। এসব অর্থের বেশিরভাগই দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে আসা বলে গোয়েন্দা সূত্রে ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থপাচার ও তৌফিকা করিমের জড়িত থাকার অভিযোগ
তৌফিকা করিম, যিনি সিটিজেন ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন, আনিসুল হকের সাথে মিলে বড় অংকের অর্থ পাচারের কাজে সহযোগিতা করেছেন। তদন্তে জানা গেছে যে, তৌফিকার মাধ্যমে আনিসুল হক কানাডাসহ অন্যান্য দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। তাদের অর্থপাচারের প্রধান গন্তব্য ছিল কানাডা, যেখানে তাদের বিপুল সম্পদের বিনিয়োগের প্রমাণ মিলেছে।
তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তার নামে এবং বেনামে প্রচুর সম্পদ আছে, যা তিনি তার ব্যাংকিং অবস্থান এবং অন্যান্য ক্ষমতা ব্যবহার করে গোপন করেছেন। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে দেশে এবং বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। আনিসুল হকের দুর্নীতির ক্ষেত্রে তিনি প্রধান সহযোগী ছিলেন এবং তাদের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সাথেও মিলে তারা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদক জানিয়েছে।
দুদকের তদন্তের গতি
দুর্নীতি দমন কমিশন আনিসুল হক ও তৌফিকা করিমের দুর্নীতির ব্যাপারে ইতিমধ্যে প্রাথমিক তদন্ত সম্পন্ন করেছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের অনেকটাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। আনিসুল হকের সম্পদ, ব্যাংক আমানত, শেয়ার এবং তৌফিকা করিমের ভূমিকা নিয়ে কমিশন গভীর তদন্তে নেমেছে।
দুদক বিশ্বাস করছে, এ ধরনের দুর্নীতি ও অর্থপাচারের কার্যক্রম দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই আনিসুল হক এবং তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরুর মাধ্যমে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হবে। দুদক ইতোমধ্যেই দেশের বাইরে পাচারকৃত সম্পদের উৎস ও গন্তব্য খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
এদিকে, আনিসুল হক ও তৌফিকা করিমের দুর্নীতির ব্যাপারে জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। মানুষ আশা করছে যে, সরকার এবং দুদক দুর্নীতির এই বিশাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে।