রাষ্ট্র সংস্কারে পাঁচটি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ গেজেট প্রকাশ
সরকার দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামোকে সংস্কার করার লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, যার মধ্যে পাঁচটির পূর্ণাঙ্গ গেজেট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। ৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই গেজেটটি প্রকাশ করা হয়, যা দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কমিশনসমূহের বিস্তারিত বিবরণ
- পুলিশ সংস্কার কমিশন:
- উদ্দেশ্য: এই কমিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো একটি জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা। কমিশনটি জনগণের নিরাপত্তা ও সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সুপারিশ করবে।
- সদস্যগণ: ৯ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। এর প্রধান হিসেবে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইকবাল, সাবেক বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক শেখ সাজ্জাদ আলী এবং ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ মো. গোলাম রসুল অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
- নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন:
- উদ্দেশ্য: বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা। কমিশনটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে।
- সদস্যগণ: ৮ সদস্যের এই কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম সুজন, যিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এবং নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ এবং নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম।
- বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন:
- উদ্দেশ্য: বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাবনা তৈরি করা।
- সদস্যগণ: ৮ সদস্যের এই কমিশনের প্রধান সাবেক আপিল বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি এমদাদুল হক, বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট তানিম হোসেন শাওন।
- দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন:
- উদ্দেশ্য: বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। কমিশনটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে।
- সদস্যগণ: প্রধান হিসেবে রয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সাবেক কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম।
- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন:
- উদ্দেশ্য: জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করা।
- সদস্যগণ: ৮ সদস্যের এই কমিশনের প্রধান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। সদস্যদের মধ্যে সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
নির্দেশনা ও কার্যক্রম
কমিশনগুলো ৩ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু করবে এবং তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে। প্রতিবেদনে কমিশনগুলো জনমনে বিভিন্ন মতামত ও চিন্তাভাবনা বিবেচনায় নেবে।
কমিশনের কার্যালয় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে এবং প্রধান ও সদস্যরা সরকারের নির্ধারিত পদমর্যাদা, বেতন, সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে, তারা চাইলে অবৈতনিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
কমিশনগুলো প্রয়োজনমতো উপযুক্ত ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার অনুমতি পাবে এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন
এই কমিশনের গেজেট প্রকাশ এখনও বাকি রয়েছে। এটি সংস্কারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে এবং জনমনে এটি নিয়ে আলোচনা চলছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। এই উদ্যোগ দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরো শক্তিশালী এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহিমূলক করতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।