December 23, 2024
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে, প্রয়োজনে নতুন আইন

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে, প্রয়োজনে নতুন আইন

অক্টো ৩, ২০২৪

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ সংশোধন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় আইন বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনরা আইনটির বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। সভায় বক্তারা উল্লেখ করেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনটি রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনে ব্যবহৃত হয়েছে, যা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী। তাঁরা মনে করেন, আইনটি সংশোধন নয়, পুরোপুরি বাতিল করা উচিত। প্রয়োজনে সংবিধান অনুযায়ী সাইবার সুরক্ষা এবং নারীদের অধিকার সুরক্ষায় নতুন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনটি অবশ্যই বাতিল করা হবে এবং পরবর্তীতে এর পরিবর্তে নারীদের সুরক্ষা ও সাইবার সুরক্ষার জন্য নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, “মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কিত সব মামলা সরকার দ্রুত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, সব মামলা চাইলেই বাতিল করা সম্ভব নয়। আদালতের বিচারাধীন মামলাগুলোতে আইনি সীমাবদ্ধতা আছে, যা সরকারকে বিবেচনায় রাখতে হবে।”

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন মানুষের মাঝে অনাস্থার সৃষ্টি করেছে, তাই এই আইনটি স্থগিত বা বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আইনটি সংশোধন বা পরিবর্তন করার আগে এটিকে স্থগিত রাখা উচিত, যাতে নতুন কোনো মামলা না হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান সাইবার নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তনসহ পুরো আইনটি বাতিলের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আইনটি নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করছে, তাই এটি বাতিল করা উচিত।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, সংশোধিত আইনে মানহানির বিষয়টি তুলে দেওয়াকে স্বাগত জানাই। এছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলাগুলোর ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত।

ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দেওয়া ক্ষমতাগুলো নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত, বিশেষত গ্রেপ্তার ও তল্লাশির ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, আইন দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশে বাধা দেওয়া অনুচিত।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া, সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ, ব্যারিস্টার মোস্তাফিুর রহমান খান, সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, লেখক ও বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমানসহ অনেকে।

বক্তারা জানান, ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০১৮ সালে পরিবর্তিত হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়, যা ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইনে রূপান্তরিত হয়। আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত সাইবার ট্রাইব্যুনালগুলোতে ৫,৮১৮টি মামলা দায়ের হয়েছে, যা এই আইনের অপপ্রয়োগের প্রমাণ।

Leave a Reply