January 11, 2025
নতুন দল গঠনের পথে অভ্যুত্থানের নেতারা

নতুন দল গঠনের পথে অভ্যুত্থানের নেতারা

সেপ্টে ৩০, ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নেতারা এখন রাজনৈতিক দল গঠনের পথে এগোচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অক্টোবরে জেলাভিত্তিক কমিটি গঠন করবে। ইতোমধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিএনপির সঙ্গে এবং পরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি স্বীকার করেনি, তবে সূত্রের খবর, তরুণ ও ছাত্র আন্দোলনের এ দুটি শক্তিকে সংগঠিত রাখার কাজ চলছে।

এই বৈঠকগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়া সংবিধান সংস্কার বা পুনর্লিখনের প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এবি পার্টি এবং গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নাগরিক কমিটি, তবে গণতন্ত্র মঞ্চের মাহমুদুর রহমান মান্নার অসুস্থতার কারণে তাদের সঙ্গে বৈঠক পিছিয়ে গেছে। নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভা চলছে, তবে আনুষ্ঠানিক আলোচনা পরে শুরু হবে।

বৈঠকে জাতীয় নাগরিক কমিটির ভূমিকা, বিশেষ করে শিল্প খাত এবং পাহাড়ে সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিরসনে তাদের কী ভূমিকা থাকবে, তা নিয়ে কথোপকথন হচ্ছে। কোনো দল প্রশ্ন তুলেছিল যে নাগরিক কমিটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের অংশ কিনা। নাগরিক কমিটির নেতারা নিজেদের সরকারি দল হিসেবে না মানলেও সরকারের সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন।

কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হবে না, তবে অভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক দল বা দর্শনের জন্ম হতে পারে। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে বিরোধ তৈরি হলে তা অভ্যুত্থানের লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি করবে। বৈঠকে দলগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয়েছে, যেন তারা অভ্যুত্থানের চেতনা নষ্ট না করে।

৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সরকারি হিসাবে জুলাইয়ের গণহত্যায় ৭০০ জন নিহত এবং বেসরকারি হিসাবে ১,৫৮১ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন প্রায় ৩১,০০০ আন্দোলনকারী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ১ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও, এতে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন দল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

আন্দোলনের পর কিছু জায়গায় চাঁদাবাজি ও দখল কার্যক্রমে জড়িত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত সমন্বয়করা এসব কার্যকলাপ ঠেকাতে বিভিন্ন জেলায় মতবিনিময় সভা করছেন এবং একটি সংগঠিত কাঠামো গড়ার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করছেন।

আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং শিবিরের সদস্যদের নতুন কমিটিতে কোনো পদে থাকতে দেওয়া হবে না। এছাড়া কমিটির পদগুলোতে “সমন্বয়ক” শব্দটি বাদ দিয়ে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব রাখা হবে।

লংটাইম কর্মসূচি:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য ‘লংটাইম’ কর্মসূচি নিয়ে আসছে। এই কর্মসূচির আওতায় প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর জন্য কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। সেমিনার, মতবিনিময় সভা এবং মাঠপর্যায়ে কর্মসূচির মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

মতবিনিময় সভার অর্থায়ন:
মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা স্থানীয় বাসায় থাকেন। অর্থায়নের জন্য ক্রাউড ফান্ডিং ও কিছু সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোটা সংস্কারের দাবিতে গঠিত হলেও, শেখ হাসিনার পতনের পর এ আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে বড় ভূমিকা রাখছে।

Leave a Reply