আওয়ামী গডফাদার: তাঁর ভয়ে ‘টুঁ–শব্দ’ করতেন না কেউ
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিরোধী দল এবং নিজের দলের ভিন্নমতাবলম্বীদের এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি তিনি সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল করে বিপণিবিতান, বাগানবাড়ি এবং অন্যান্য অবকাঠামো গড়ে তুলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে গুম-খুনের অভিযোগও রয়েছে। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের এই সাবেক সংসদ সদস্য নিজ এলাকায় ছিলেন একপ্রকার ‘অপ্রতিরোধ্য’।
বেপরোয়া শাসন
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ফজলে করিম চৌধুরীর বেপরোয়া আচরণ শুরু হয়। কেউ তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পেত না। তিনি এলাকায় এক ধরনের একচ্ছত্র শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রভাবে দুই শতাধিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং শিক্ষক-কর্মচারী তাদের কর্মস্থলে যেতে পারেননি। তাঁর বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ৭০ থেকে ৮০ জন কর্মী ছিল, যারা তাঁর নির্দেশে কাজ করত। এমনকি ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সংগঠন মুনিরীয়া যুব তবলিগ কমিটির ৪৬টি কার্যালয় ধ্বংস করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
রাজনৈতিক জীবন
ফজলে করিম ১৯৯৬ সালের আগে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন, যা ছিল যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দল। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২4 সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
সম্পত্তি এবং ক্ষমতা
ফজলে করিমের রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সম্পদও বৃদ্ধি পায়। ২০০৮ সাল থেকে ২০২4 সাল পর্যন্ত তাঁর বার্ষিক আয় ১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি ব্যবসা থেকে কৃষি ও মৎস্য খাতেও বিনিয়োগ করেন। রাউজানে সরকারি খাস জমি দখল করে বাগানবাড়ি ও বিপণিবিতান গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
দখল ও দুর্নীতির অভিযোগ
ফজলে করিমের বিরুদ্ধে সরকারি জায়গা দখল করে বিপণিবিতান ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে তাঁর পছন্দের লোকদের নির্বাচিত করিয়েছেন। ঠিকাদারদের কাছ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পে ১০ শতাংশ কমিশন নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
গুম, খুন এবং এলাকা ছাড়া
ফজলে করিমের বিরুদ্ধে গুম ও খুনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বাহিনীর হাতে বেশ কয়েকজন যুবদল এবং আওয়ামী লীগ কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া, বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের এলাকা ছাড়া করা হয়েছে, এমনকি নিজ দলের নেতারাও তাঁর বিরোধিতা করার সাহস পাননি।
বর্তমান পরিস্থিতি
৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ফজলে করিম কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন এবং ১২ সেপ্টেম্বর অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় তাঁকে আটক করা হয়। চট্টগ্রাম কারাগারে আটক থাকা ফজলে করিমের বিরুদ্ধে জায়গা দখল, গুম, খুনের অভিযোগে ১২টি মামলা হয়েছে।