হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন, নিশ্চিত করল হিজবুল্লাহ
লেবাননের হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ তথ্য জানিয়েছে বলে এএফপি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ সংগঠনের মহান ও অমর শহীদদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, যাদের তিনি ৩০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
এর আগে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক এক্স বার্তায় দাবি করে, লেবাননভিত্তিক শিয়া ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। তারা জানায়, ‘হাসান নাসরুল্লাহ আর বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করতে পারবেন না।’
শুক্রবার রাতে ইসরায়েল রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালায়। জানা যায়, ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টারে সংগঠনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও অন্যান্য নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে। এর পরপরই নাসরুল্লাহর নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়।
তবে ওই হামলায় নাসরুল্লাহর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তাৎক্ষণিকভাবে হিজবুল্লাহ কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। হাসান নাসরুল্লাহ (৬৪) জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬০ সালে, বেড়ে উঠেছেন বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় বুর্জ হামুদ এলাকায়। তার বাবা আবদুল করিম ছিলেন সবজি বিক্রেতা। নাসরুল্লাহ তার ৯ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন।
১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের সময় নাসরুল্লাহ শিয়া মুভমেন্ট ‘আমাল’-এ যোগ দেন। ১৯৮২ সালে তিনি আরও কয়েকজনের সঙ্গে দল থেকে বেরিয়ে যান এবং ১৯৮৫ সালে হিজবুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সংগঠনে যোগ দেন।
হিজবুল্লাহ শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে ইসলামের প্রধান দুই শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ইসরায়েলকে মুসলিম ভূমি দখলকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে ধ্বংস করার ডাক দেয়।
১৯৯২ সালে, মাত্র ৩২ বছর বয়সে, নাসরুল্লাহ হিজবুল্লাহর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে ইসরায়েলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তার পূর্বসূরি আব্বাস আল-মুসাবি। হিজবুল্লাহর প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর, নাসরুল্লাহ তার প্রথম কাজ হিসেবে মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেন এবং ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার নির্দেশ দেন।
হাসান নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সংগঠনটি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী হামাসসহ বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেয়। হিজবুল্লাহ বর্তমানে লেবাননের রাজনৈতিক ও সামরিক অঙ্গনে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে সক্রিয়।
গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল উত্তেজনা বেড়ে যায়। সেই সময় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের রকেট হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ এলাকা ও দখলকৃত গোলান মালভূমিতে মাঝেমধ্যেই রকেট হামলা চালাচ্ছে।
