কে এই হাসান নাসরুল্লাহ, হিজবুল্লাহ গঠনে তার ভূমিকা কী
লেবাননভিত্তিক শিয়া মুসলিম সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান শেখ হাসান নাসরুল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। তিনি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র সংগঠনের মর্যাদা লাভ করে।
সম্প্রতি লেবাননে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টারে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল, এতে হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লাহ নিহত হন। নাসরুল্লাহর নেতৃত্বেই হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনের হামাস, ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটের মজুত গড়ে তুলেছে।
হিজবুল্লাহর যাত্রা শুরু হয়েছিল ইসরায়েলি দখলদারদের লেবানন থেকে তাড়ানোর লক্ষ্যে। শুরুতে একটি মিলিশিয়া দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও, নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে এটি লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়। রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে হিজবুল্লাহ লেবাননের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সামরিক তৎপরতার পাশাপাশি সংগঠনটি লেবাননের জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত।
হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠা এবং নাসরুল্লাহর উত্থানের ইতিহাস বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৬০ সালে লেবাননের বুর্জ হামুদ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন হাসান নাসরুল্লাহ। ১৯৭৫ সালে লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় তিনি ‘আমাল’ নামে শিয়া মুভমেন্টে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে ইরাকের নাজাফে কিছু সময় কাটান। ১৯৮২ সালে ইসরায়েলের আগ্রাসনের পর আমাল থেকে বেরিয়ে এসে ‘ইসলামিক আমাল’ নামে একটি নতুন সংগঠন গঠন করেন, যা পরবর্তীতে হিজবুল্লাহ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে নাসরুল্লাহ হিজবুল্লাহর প্রধান হন। তার পূর্বসূরি আব্বাস আল-মুসাবি ইসরায়েলি হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হলে তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইসরায়েলি দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলা।
২০০০ সালে নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে লেবাননের দক্ষিণ থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পিছু হটে। এ ঘটনা নাসরুল্লাহকে আরব বিশ্বে নায়কোচিত মর্যাদায় আসীন করে। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে তার সংঘর্ষ থেমে থাকেনি। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ইসরায়েলের সীমান্তে আক্রমণ চালালে ইসরায়েল ব্যাপক হামলা শুরু করে। ৩৪ দিন ধরে চলা এ যুদ্ধে প্রায় ১,১২৫ লেবাননি এবং ১১৯ ইসরায়েলি সেনা নিহত হন।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ইসরায়েলি হামলার জবাবে হিজবুল্লাহও ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে। বর্তমানে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে প্রায় ৮০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতেই আজ শনিবার হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লাহর নিহত হওয়ার খবর আসে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স