স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে অগ্রাধিকারে থাকুক ৮ বিষয়
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশটির বিভিন্ন খাতে মৌলিক সংস্কারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যখাত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। স্বাস্থ্যখাতে দ্রুত এবং দৃশ্যমান উন্নয়ন আনতে কিছু আশু পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, যা অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর করতে হবে।
১. মেডিকেল কলেজের অডিট এবং মানোন্নয়ন:
বর্তমানে দেশে ১১১টি মেডিকেল কলেজ চালু আছে। এগুলোর অনেকগুলোই রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক বিবেচনায় অনুমোদন পেয়েছে। একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে এই মেডিকেল কলেজগুলোর অডিট করা উচিত। এই কমিটি অপ্রয়োজনীয় মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করার সুপারিশ করবে এবং শিক্ষার্থীদের নিকটবর্তী কলেজে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করবে। এতে করে শিক্ষক সংকট কমে আসবে এবং মানহীন চিকিৎসক তৈরির আশঙ্কা রোধ করা যাবে।
২. ইন্টার্নশিপের সময় বৃদ্ধি:
স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের লক্ষ্যে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের সময় এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করা যেতে পারে। প্রথম বছর মেডিকেল কলেজে এবং দ্বিতীয় বছর উপজেলা হাসপাতালে কাজ করার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা হলে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হবে। এর মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা উন্নয়ন সম্ভব হবে।
৩. চিকিৎসকদের পদোন্নতি ও পদায়ন:
স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসকদের পদোন্নতির দীর্ঘদিনের জটিলতা কাটাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, শিশু বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে বহু পদ খালি রয়েছে। এই পদগুলোতে দ্রুত পদোন্নতি এবং পদায়নের মাধ্যমে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর সেবার মান বাড়ানো সম্ভব হবে।
৪. যন্ত্রপাতির অডিট:
উপজেলা, জেলা এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির অডিট করে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় বন্ধ করা উচিত। একই সঙ্গে মামলার জটিলতা দূর করে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং ল্যাব টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
৫. চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়ন:
বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রির স্বীকৃতি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। সরকারের উচিত এই কমিটিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা।
৬. স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের সমন্বয়:
স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। একটি সার্জারির ফি কীভাবে নির্ধারণ করা হয়, তা স্পষ্ট নয়। ডায়াগনস্টিক টেস্ট, সার্জারি ফি এবং অন্যান্য সেবার মূল্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা উচিত।
৭. বিএমডিসি, বিএমআরসি, বিএনএমসি-র পুনর্গঠন:
বিএমডিসি, বিএমআরসি এবং বিএনএমসি দীর্ঘদিন ধরে সঠিক নেতৃত্বের অভাবে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করতে নেতৃত্বে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে।
৮. স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন:
স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় অবিলম্বে একটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন জারি করতে হবে। এতে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরাপদে কাজ করতে পারবে এবং জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
পরিশেষে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যনীতিকে আরও জনবান্ধব করতে দ্রুত কিছু মৌলিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন। মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।
লেখক
ডা. ফজলে রাব্বী চৌধুরী
পিএইচডি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য
সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়