খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে চারজন নিহত, ১৪৪ ধারা জারি
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের সৃষ্টি করেছে, যার ফলে প্রাণহানি, আহতের সংখ্যা, এবং ব্যাপক সহিংসতা বেড়েছে। খাগড়াছড়ি শহরে চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে একজন যুবক নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে, যা শুক্রবার সকালে রাঙামাটিতেও ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতায় দুই জেলায় এ পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছেন এবং উভয় পক্ষের অন্তত ৭০ জন আহত হয়েছেন।
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘর্ষের সময় দোকানপাট ও বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে, যাতে ওই অঞ্চলে বড় ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এর মধ্যেও সংঘাত চলমান রয়েছে।
খাগড়াছড়ির নিহতদের মধ্যে ধন রঞ্জন চাকমা, রুবেল ত্রিপুরা এবং জুরান চাকমার নাম পাওয়া গেছে। রাঙামাটিতে একজন নিহত হলেও তার পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
সংঘাতের সূত্রপাত হয় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের গুজবকে কেন্দ্র করে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় বাঙালিদের একটি মিছিলের সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এসময় একটি মার্কেটে আগুন দেওয়া হয় এবং গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় এবং গভীর রাতে দুই পাহাড়ি যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
রাঙামাটিতেও পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। সেখানে পাহাড়িদের একটি মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় সংঘর্ষ শুরু হয় এবং বেশ কয়েকটি দোকান ও যানবাহনে হামলা চালানো হয়। এতে একজন নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হন।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি, সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েনের পাশাপাশি শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো উসকানির কারণে সংঘাতের আশঙ্কা এখনও রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।
এ উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সম্পর্কের ভঙ্গুর অবস্থা, এবং সাম্প্রতিক ঘটনা সংঘাত আরও তীব্র করেছে। এখন প্রয়োজন সঠিক তদন্ত, শান্তি বজায় রাখতে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি, যাতে উসকানি ও গুজবের মাধ্যমে সংঘাত এড়ানো যায়।