পোড়া লাশ দাফনের পর মা-বাবা জানতে পারলেন, ছেলে বেঁচে আছেন
গত ৫ আগস্ট, টেলিভিশনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবর দেখে বিজয় মিছিলে যোগ দিতে যান ১৯ বছর বয়সী মো. রিফাত হোসেন। কিন্তু সেদিনের পর তিনি আর সাভারের আশুলিয়ায় তাঁর বাসায় ফেরেননি। মা-বাবা এলাকার হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান পাননি।
পরদিন রিফাতের বাবা লুৎফর প্রামাণিক আশুলিয়া থানার সামনে স্তূপ করে রাখা পোড়া লাশগুলোর মধ্যে একটি লাশকে তাঁর ছেলের মতো মনে করেন। একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তিনি সেই লাশটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় ফেরেন। সেখানে লাশটি দাফন করে মিলাদও পড়ান। কিন্তু আশুলিয়ায় ফিরে এসে তারা জানতে পারেন, তাঁদের ছেলে রিফাত আসলে বেঁচে আছেন।
ছেলের মৃত্যুর খবরে শোকাহত এই বাবা-মা যখন ছেলের বেঁচে থাকার খবর পান, তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। তবে রিফাতের বেঁচে থাকলেও মাথায় গুলি লাগার কারণে তাঁর অবস্থা গুরুতর, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।
রিফাতের মা পারুল বেগম বলেন, “ছেলের মুখে আবার ‘মা’ ডাক শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু আগের মতো তো পাইনি।”
রোববার সকালে আশুলিয়ার পলাশবাড়ীতে তাঁদের ছোট্ট বাসায় দেখা যায়, রিফাত বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই দুর্বল; একা শৌচাগারে যেতে পারেন না, হাঁটতে পারেন না, কোনো কাজও করতে পারেন না। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে কান্নাকাটি করেন। কখনো মা-বাবাকে চিনতে পারেন, কখনো আবার চিনতে পারেন না। আগের কোনো ঘটনা মনে করতে পারেন না, আর মনে করতে না পেরে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিজের নাম জিজ্ঞেস করলে রিফাত হাসিমুখে তা বলতে পারেন, কিন্তু মা-বাবার পরিচয় জানাতে গিয়ে থেমে যান এবং বলেন, “হ্যাঁ, তাঁরা তো আমার আত্মীয়।”
পড়াশোনা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। খানিকক্ষণ পর মাকে চিনতে পারলেও মাথায় যন্ত্রণা হলে মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেস করেন, কেন তাঁর এমনটা হচ্ছে।
রিফাতের এমন অবস্থায় তাঁর মা-বাবা অত্যন্ত মর্মাহত। ছেলের সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চান তাঁরা।